ফাইল চিত্র।
নৈহাটির দেবকের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে জখম অভয় মান্ডির (২৭) মৃত্যু হল শুক্রবার রাতে। কল্যাণীর হাসপাতাল থেকে তাঁকে আনা হচ্ছিল কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছনোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫।
শনিবার বিকেলে দেহগুলি গ্রামে পৌঁছয়। চার দিকে তখন কান্নার রোল। বারুদের গন্ধে বাতাস ভারী। এ দিনই বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।
শুক্রবার রাতে নৈহাটি থানার পুলিশ ওই বাজি কারখানার মালিক নুর হোসেনকে আমডাঙা থেকে গ্রেফতার করেছে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সব বাজি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া
হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। কারখানার শ্রমিকদের জন্য বিকল্প রোজগারের পথ খুলতে পুলিশকর্তারা বৈঠক শুরু করেছেন। শনিবার সকালে ভাটপাড়ার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে একটি মুদিখানায় আগুন লাগে। সেখানে প্রচুর বাজি মজুত ছিল। ফলে তীব্র শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। আতঙ্ক ছড়ায়। কিছু ক্ষণের মধ্যে আগুন নেভায় দমকল।
শুক্রবার দুপুরে বিস্ফোরণের পরে কারখানা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন দেবকের বাসিন্দা অভয় মান্ডি। তাঁর শরীর সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল। কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উন্নতি হয়নি। বরং বিকেলের পর থেকে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বেশি রাতে তাঁকে কলকাতায় পাঠানো হলেও চিকিৎসার সুযোগ মিলল না।
এক দশকে বাজি বিস্ফোরণের বলি
২০২০: নৈহাটিতে মৃত ৫
২০১৬: বজবজে মৃত ২, হুগলির গোঘাটে ১
২০১৫: পূর্ব মেদিনীপুরের পিংলায় মৃত ১২
২০১৪: বর্ধমানের ময়নায় মৃত ৩
২০১৩: কালনায় ২, পাঁশকুড়ায় ৩, হুগলির বেগমপুরে মৃত ৪
২০১১: পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে মৃত ৩
২০১০: হুগলির ধনেখালিতে মৃত ৬
২০০৯: বর্ধমানের কালনায় মৃত ৮, হুগলির খানাকুলে ৩
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরেই কাঁচরাপাড়ায় গা ঢাকা দিয়েছিল বাজি কারখানার মালিক নুর। কিন্তু তার মোবাইলের উপরে নজরদারি চালাচ্ছিল পুলিশ। রাতের দিকে নুর আমডাঙা হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখনই তাকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার ব্যারাকপুর আদালত তাকে ন’দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গেও কথা বলেন। দুপুরের পরে পাঁচ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল ঘটনাস্থল থেকে ছাই এবং অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে। ওই দলের সদস্য দেবাশিস সাহা বলেন, ‘‘নমুনা পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে, কী ধরনের রাসায়নিক এখানে মজুত ছিল।’’
নৈহাটির কুলিয়াগড়ের বিন্দা সাঁপুই মারা গিয়েছেন বিস্ফোরণে। ওই কারখানায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করতেন বিন্দা। তাঁর অসুস্থ স্বামী সুশান্ত কোনও কাজ করতে পারেন না। বড় ছেলেরও কাজকর্ম নেই। ছোট ছেলে সৈকত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সে বলে, ‘‘মা-ই ছিল একমাত্র রোজগেরে। এখন কী করে চলবে? পরীক্ষাটা দিতে পারব কি না, তা-ও জানি না।’’ দেবকের রাম বেসরাও ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। শনিবার ঘরের দাওয়ায় সমানে কেঁদে চলেছিলেন তাঁর স্ত্রী বুধনি। পরিচিত যাঁকে দেখছেন, তাঁকেই বলছেন, ‘‘ওকে ফিরিয়ে এনে দাও না। আমাদের যে আর কেউ নেই।’’
মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইনি আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘গত বছর উত্তরপ্রদেশে (বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে) মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ
দেওয়া হলে নৈহাটির ক্ষেত্রে হবে না কেন?’’ পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘অবৈধ বাজি কারখানা চলতে
দেওয়া হবে না। শ্রমিকদের জন্য বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করতে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, দ্রুত তা রূপায়িত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy