জেলা পরিদর্শকের অফিসে শিক্ষিকারা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
আজিমগঞ্জের বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নিগ্রহের ঘটনায় কার্যত হাত গুটিয়েই বসে রইল পুলিশ ও প্রশাসন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ তদন্ত শুরু করে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করল না। আর মঙ্গলবার বহরমপুরে দেখা করতে এসে সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা আধিকারিকের জন্য পাক্কা চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল শিক্ষিকাদের।
শিক্ষিকা ও পার্শ্বশিক্ষিকাদের গোলমালে মাথা গলিয়ে সোমবার সকালে কেশরকুমারী গার্লস হাইস্কুলের গেটে প্রধান শিক্ষিকাকে হেনস্থা করেছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে নিগৃহীত হন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকা। ঘটনার পরে স্কুলের শিক্ষিকারা এক জোট হয়ে জিয়াগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, স্থানীয় তৃণমূল নেতা নির্মল দত্তের নেতৃত্বে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক ওই হামলা চালান। তার পরেও পুলিশ নির্মলবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি।
লালবাগের সার্কেল ইন্সপেক্টর অঞ্জন ঘোষ বলেন, “সুনির্দিষ্ট ভাবে থানায় কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। পুলিশের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা পড়েছে। সেখানে স্কুলের ১৭ জন শিক্ষিকার স্বাক্ষর রয়েছে। ফলে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতার করা হয়নি। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিক্ষিকারা অবশ্য মনে করছেন শাসকদলের সঙ্গে যোগসূত্রেই ছাড় পেয়ে গেলেন নির্মলবাবু। এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত বলেন, “স্কুলের শিক্ষিকাদের নিগ্রহের ঘটনায় শাসক দলের নেতা জড়িত থাকায় পুলিশ পদক্ষেপ করতে গড়িমসি করছে। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জিয়াগঞ্জ থানা বিষয়টিকে লঘু করে দেখছে। এটা বাঞ্ছনীয় নয়।”
মুর্শিদাবাদের বিধায়ক কংগ্রেসের শাওনী সিংহ রায় আবার দাবি করেছেন, আজিমগঞ্জের ওই স্কুলের বিষয়টি জানিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। শাওনীদেবী বলেন, “স্পিকারের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আমাকে ডেকেও পাঠান। সোমবারের ঘটনা বিস্তারিত ভাবে তাঁকে জানাই। ওই বিষয়ে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানোর কথা আমাকে বলেছেন।”
এ দিকে, নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আতঙ্কিত শিক্ষিকারা। সেই মতো স্কুলের গেটে নোটিস বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে নিরাপত্তার দাবিতে এ দিন প্রায় ১৭ জন শিক্ষিকা বহরমপুরে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর হস্তক্ষেপও দাবি করেন তাঁরা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বিমল পাণ্ডে তাঁদের বলেন, “স্কুল খোলা রেখে সমাধানসূত্র বের করতে হবে। কোনও ভাবেই স্কুল বন্ধ রাখা চলবে না। গোটা বিষয়টি শিক্ষিকাদের লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। অবিলম্বে ওই সমস্যার সমাধান করা হবে।”
চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর জেলা প্রকল্প আধিকারিক তানিয়া পারভিনও বিকেলের দিকে শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র বের না হওয়ায় ‘হতাশ’ শিক্ষিকারা। জেলা প্রকল্প আধিকারিক তানিয়া পারভিন বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং থাকার জন্য শিক্ষিকাদের সঙ্গে দেখা করতে আমার দেরি হয়েছে। আমার সঙ্গে বৈঠক করার কোনও কথা শিক্ষিকাদের ছিল না। সোমবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা আমার সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু আগে থেকেই এ দিন মিটিং ঠিক ছিল। ওই মিটিং শেষ হওয়ার পরেই আমি তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি।” জেলা প্রকল্প আধিকারিকও সোমবারের ঘটনা জানিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার কথা বলেন। তানিয়া পারভিন বলেন, “সেই সঙ্গে পার্শ্বশিক্ষিকাদের নিয়ে স্কুলের সমস্যার কথা লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই লিখিত অভিযোগ পেলেই সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্কুল কর্তৃপক্ষ এর আগে গত মার্চে এই সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও সমস্যা এত দিন জিইয়ে রাখা হল কেন? জেলা প্রকল্প আধিকারিক বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের জন্য এত দিন কোনও কাজ করা যায়নি।” মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পার্শ্বশিক্ষিকাদের করণীয় কী তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রকল্প আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে অবিলম্বে মীমাংসা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy