পুলিশ আছে পুলিশেই। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে গিয়ে এ বার বাড়ির মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠল বহরমপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বহরমপুর লাগোয়া বানজেটিয়া সুন্দরকলোনির মণ্ডলপাড়ায়। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে বহরমপুর থানার চার পুলিশকর্মী ওই বাড়িতে ঢুকে অভিযুক্তের স্ত্রীকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করে। ঘটনার সময়ে ওই চার পুলিশকর্মী ‘মদ্যপ’ অবস্থায় ছিলেন বলেও অভিযোগ। রাতেই ওই মহিলা বহরমপুর থানায় গিয়ে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিলে কী হবে? ওই ব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে যা খুশি অভিযোগ করলেই হবে! ঘটনাটি আগে তদন্ত করে দেখা হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’বছর আগের একটি পুরনো মামলায় মণ্ডলপাড়ার এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ এ দিন রাতে তাঁর বাড়িতে যায়। পেশায় লরি চালক ওই ব্যক্তিকে ধরে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পরিবারের লোকজন পুলিশকে বাধা দেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রী বলেন, “রাত ১২টা নাগাদ চার জন পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তবে পুলিশ যে মামলার কথা বলছিল, সেই মামলায় আমার স্বামী আগেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। পুলিশকে আদালতের কাগজপত্র দেখানোরও চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও কথা শুনতে চায়নি।” ওই মহিলার অভিযোগ, “সকলেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ঠিক মতো দাঁড়িয়ে কথা বলার অবস্থাও তাঁদের ছিল না।” অভিযুক্ত ওই পুলিশকর্মীদের একজন অবশ্য গোটা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের ফাঁসাতে ওই মহিলা এমন মিথ্যে অভিযোগ করছেন।”
ওই মহিলার এক আত্মীয় বলেন, “আমার বৃদ্ধা বাবা পুলিশ অফিসারদের আদালতের কাগজপত্র দেখার কথা বলতে গেলে তাঁকেও ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। এর পরে দাদাকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বৌদি বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চুলের মুঠি ধরে বৌদিকে মারধর করে তারা। এমনকী গলার টুঁটি চেপেও ধরে।”
তিনি বলেন, “রাতের অন্ধকারে মহিলা পুলিশ ছাড়াই চার জন পুলিশ কর্মী এসে বাড়ির মহিলাদের উপরে নির্যাতন করায় পাড়ার লোকজনও ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকর্মীদের ঘেরাও করে রাখে। পরে পুলিশকর্মীরা ফোন করে খবর দেওয়ার পরে বহরমপুর থানার একজন পুলিশ অফিসার এসে আমাদের সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।”
ওই রাতে যে চার জন পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করার জন্য গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এক জন এএসআই পদমর্যাদার, দুজন কনস্টেবল এবং এক জন ভিলেজ পুলিশ। মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতের সদস্য কংগ্রেসের মিঠু মণ্ডল বলেন, “পুলিশের ওই আচরণ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি জানার পরে ওই রাতেই মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়।”
তবে ওই মহিলার থানায় দায়ের করা অভিযোগ পুলিশ কেন এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করেনি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বহরমপুরের বিশিষ্ট আইনজীবী পীযুষ ঘোষ বলেন, “পুলিশের উচিত ছিল ওই অভিযোগপত্রকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪বি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা। এ ক্ষেত্রে পুলিশ কেন সেটা করেনি সেটাই তো আশ্চর্যের।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর ওই ট্রাক চালক-সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়। তার মধ্যে একটি মামলায় ওই চালক জামিনে মুক্তি পান। অপর মামলায় গ্রেফতারের জন্য পুলিশ ওই চালকের বাড়িতে গিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy