পয়লা বৈশাখ ছাড়া বাঙালির আর যে বাংলা তারিখটি মনে থাকে, সেটা এ বার ভোটে প্রায় বিস্মরণের পর্যায়ে চলে গেল। ২৫ বৈশাখ উদ্যাপনে যে আগ্রহ ও উদ্দীপনা গতবারও দেখা গিয়েছিল, এ বার তার ছিঁটেফোটার কেবল দেখা মিলেছে। সকালে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে প্রভাত ফেরির দেখা মেলেনি। বেলায় পাড়ায় পাড়ায় মঞ্চ বেঁধে রবীন্দ্রনাথের ছবি রেখে মাল্যদান এবং সঙ্গীতের যে আয়োজন প্রতি বছর দেখা যায়, তা এ বার হয়নি। সন্ধ্যায় রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকে বহু জায়গায়। তা-ও কিন্তু এ বার সারা হয়েছে কোনও মতে।
বিশেষ করে যে এলাকাগুলিতে সোমবার ভোট, সে সব এলাকাতেই রবীন্দ্রনাথকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিকে। বরং এই দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবেই গণ্য করে শুক্র এবং শনিবারের শেষ বেলার ভোটের প্রচার জমে উঠেছে সব জায়গাতেই। এমনকী, সরকারি উদ্যোগে ২৫শে বৈশাখ পালনও এ বার বন্ধ হয়ে গিয়েছে নদিয়ায়। জেলার সব থেকে বড় অনুষ্ঠানটি হত কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রভবনে। ভোরে স্থানীয় সংগঠনগুলির শিল্পীদের নিয়ে হত অনুষ্ঠান। এ বার কিন্তু রবীন্দ্রমূর্তিতে মাল্যদানেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়।
সকালের অনুষ্ঠানটিই সারা দিনের সুর বেঁধে দিত। এ বার সেটিই না-হওয়ায় সংস্কৃতি জগতের মন খারাপ। স্থানীয় একটি নাট্য দল রূপকথার পরিচালক তৃষিত মৈত্র বলেন, “কোনও অবস্থাতেই রবীন্দ্রনাথকে ভুলে থাকা চলে না। ভোট হলেও না। কিন্তু আজ সারা দিন অন্য বারের চেয়ে অন্য ভাবে কাটল।” তবে তৃণমূলের উদ্যোগে রবীন্দ্রজয়ন্তীর বড় আয়োজন করা হয়েছে কৃষ্ণনগরে। সন্ধ্যায় পোস্ট অফিস মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় বিরাট একটি অনুষ্ঠান। আয়োজকদের তরফে তৃণমূল শহর যুব কংগ্রেসের সভাপতি দীপক বিশ্বাস বলেন, “ভোট থাকলেও রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস উদ্যাপন করতেই হবে। সে কারণেই ভোটের মুখেও এই আয়োজন।” কৃষ্ণনগর ডাকঘরের কর্মীরাও একটি অনুষ্ঠান করেছেন। তবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কৃষ্ণনগর সাংস্কৃতিক মঞ্চের আয়োজনে কবিপ্রণাম। প্রতি বছর শহরের সব সংগঠন মিলে এই অনুষ্ঠান করা হত। শহরের ঐতিহ্যের সঙ্গে তা যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এ বার তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই মন খারাপ। একটি নৃত্য সংস্থার শিক্ষক প্রশান্ত পাল বলেন, “ভোটের জন্য রবীন্দ্রনাথকে আমার ভুলে যাচ্ছি, এটা ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে।” গত বছরে ২৫শে বৈশাখ সারা দিনে নবদ্বীপে ১৩টি অনুষ্ঠান হয়েছিল। এ বার সংখ্যাটা মাত্র ৩। রবীন্দ্রায়ন এবং শ্রীক্ষেত্রর প্রভাতী রবীন্দ্রজয়ন্তী এবং একটি সারদা শিশুতীর্থ স্কুলের অনুষ্ঠান ছিল সকালে। তারপরেই দাঁড়ি। সারা দিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আর তেমন কোনও অনুষ্ঠান হয়নি শহরে। এ ছাড়া, সকালে চোখে পড়েছে সিসৃৃক্ষুর আয়োজনে একটি মাত্র পদযাত্রা। এ নিয়েও আক্ষেপ শহরের মানুষের। সায়ক সংগঠনের মোহন রায় বলেন, “ঠিক ছিল ভোটের পরদিন সন্ধ্যায় রবীন্দ্রকজয়ন্তী করব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেলাম। ফলাফল বের হোক, তারপরে অনুষ্ঠান করা যাবে।”
সাধারণত রবীন্দ্রজয়ন্তী করে বিভিন্ন ক্লাবগুলি। এ বার ভোটের জন্য ক্লাব সদস্যদের হাতে সময় নেই। তা ছাড়া, রবীন্দ্রজয়ন্তী করা হয় রাস্তার মোড়ে বা ফাঁকা জায়গায় মঞ্চ বেঁধে। ঠিক যে ভাবে সরস্বতী পুজো হয়। কিন্তু ভোটের প্রচারে এ বারক সেই জায়গাটিই আর পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও ফেস্টুন কোথাও ফ্লেক্স কোথাও কাটআউট দাঁড়িয়ে রয়েছে জায়গা জুড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy