Advertisement
০২ অক্টোবর ২০২৪

বন্ধুকে খুন করার নালিশ, ধৃত যুবক

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অমিয় বিশ্বাস (২৮)। বাড়ি আরবপুর গ্রামের গাড়াপাড়ায়।

 অমিয় বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

অমিয় বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হোগলবাড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৫:১৯
Share: Save:

বন্ধুকে খুনের অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ওই যুবক-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হোগলবাড়িয়া থানা এলাকার ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অমিয় বিশ্বাস (২৮)। বাড়ি আরবপুর গ্রামের গাড়াপাড়ায়। অমিয় ও তাঁর বন্ধু অনিমেষ মণ্ডল বেশ কয়েক বছর ধরে করিমপুরের একটি মোটরবাইকের শোরুমে কাজ করতেন। দু’জনের মধ্যে এতটাই বন্ধুত্ব ছিল যে, তাঁরা প্রায় সব সময় একসঙ্গে ঘোরাফেরা করতেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে অমিয় কয়েকমাস আগে অনিমেষের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। চাওয়ার পরেও সেই টাকা শোধ না করায় অমিয়র উপর ক্ষুব্ধ ছিল অনিমেষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে অমিয় রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা অনসূয়া মণ্ডল বিশ্বাসকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। কিছু দিন পর অনুষ্ঠান করে সামাজিক মতে বিয়ে করে অনসূয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসার কথা ছিল। অনিমেষের সঙ্গে অমিয়র মেলামেশা স্ত্রী অনসূয়া পছন্দ করতেন না। স্বামীর সঙ্গে অনিমেষের দূরত্ব কমাতে না পেরে সম্প্রতি অনিমেষকে কড়া কথা শুনিয়েছিলেন তিনি। সেই কারণে অনিমেষের রাগ আরও বাড়ে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।

শুক্রবার বিকেলে অমিয় করিমপুর যাবেন বলে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। তারপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। বিকেলে করিমপুরে অনসূয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তাঁর। দেখা করার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে অনসূয়া বারবার ফোন করেন অমিয়কে। কিন্তু বারবার অমিয়র ফোন বেজে যাওয়ার পরে বন্ধু অনিমেষ ফোন ধরে তাঁকে জানায়, অমিয় কাজে ব্যস্ত আছেন। তাই ওঁর কথা বলার উপায় নেই। এরপর অমিয় রাতে বাড়ি না ফেরায় ঘটনার কথা জানিয়ে স্ত্রী অনসূয়া শনিবার হোগলবাড়িয়া থানায় অনিমেষ মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অনিমেষকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে অস্বীকার করলেও পরে বন্ধুকে খুন করেছে বলে স্বীকার করে নেয় সে। সে জানায়, তারা দু’জনে অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে ড্রাগ নিত। শুক্রবার রাতে যমশেরপুর মাঠের একটি নির্জন জায়গায় দু’জনে ড্রাগ নেয়। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অমিয়র কাছে ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় দু’জনের মধ্যে বচসা বাধে। তখন অতিরিক্ত ড্রাগ নেওয়ার কারণে অমিয় জ্ঞান হারিয়েছিলেন। বেঁচে থাকলে আরও বিপদে পড়তে হবে ভেবে ওঁকে মারধর করে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মেঘনা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্বাসরোধ করে ওঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে জামা দিয়ে হাত বেঁধে একটি বাগানে মাটির নীচে পুঁতে রাখে সে। গ্রামের বাসিন্দা সুকেশ মন্ডল ও সেলিম শেখ তাকে সাহায্য করে। ঘটনার কথা জানার পর তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। রবিবার সকালে বিচার বিভাগীয় আধিকারিকদের উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ তুলে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত তিনজনকে রবিবার তেহট্ট আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

অমিয়র মা শীলা বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনিমেষ আর আমার ছেলে সব সময় একসঙ্গে থাকত। এত ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের পরেও ও আমার ছেলেকে খুন করবে, আমরা ভাবতেই পারছি না!’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিয়ই ছিল বাড়ির এক মাত্র রোজগেরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE