—প্রতীকী চিত্র।
কথায় বলে, ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’।
রেশন ডিলারেরা বেচাল করলে যাদের দেখার কথা, সেই এম আর ডিস্ট্রিবিউটর আসোসিয়েশনের নদিয়া জেলা সম্পাদক অনুপ সাহার নামেও জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে। নাকাশিপারার বাসিন্দা আব্দুল হাকিমের দাবি, তিনি তথ্যপ্রমাণ-সহ অভিযোগ জানিয়েছেন এবং তা গৃহীতও হয়েছে।
আব্দুল হাকিমের অভিযোগ, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অনুপ সাহা বছরের পর বছর ধরে রেশনের আটা নিয়ে অনিয়ম করে অবৈধ পথে অঢেল টাকা রোজগার করেছেন। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের ৭ নম্বর ধারায় গণবণ্টন সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ। কিন্তু অনুপ সাহা সেই আইন অগ্রাহ্য করে রেশনের আটার অবৈধ কারবার চালাচ্ছেন। খোদ খাদ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, তিনিই এই সিন্ডিকেটের অন্যতম ‘মাথা’।
অভিযোগকারীর দাবি, নদিয়ারই আঁইশমালি এলাকায় একটি সরকার অনুমোদিত আটাকল থেকে অনুপ আটা নেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে তিনি তা ডিলারদের দেবেন। তার পর তা যাবে উপভোক্তার কাছে। কিন্তু অনুপ আটার একাংশ না নিয়ে কল থেকে টাকা নিয়েছেন। আব্দুলের অভিযোগপত্রের সঙ্গে দেওয়া ক্যাশ লেজারের পাতায় দেখা যাচ্ছে, অনুপ বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা ওই আটাকল থেকে নিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি ডিলারদের পুরো আটা দেননি। পরিবর্তে ডিলারদের তিনিও টাকা দিয়েছেন। এর ফলে অনেক গ্রাহক রেশনের আটা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। খাদ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক ব্যবসা করেন এমন এক জনের দাবি, “আমি অনেক দিন ধরেই জানি, অনুপ সাহা এই সিন্ডিকেটের অন্যতম মাথা।” যদিও অনুপের দাবি, “এই বিষয়ে কোনও কিছু আমার জানা নেই। একটা বোঝাবুঝির ভুল হতে পারে। এখন সবটাই অনলাইনে হয়। দফতর সব নজর রাখে।”
একই কায়দায় আটার বদলে কল থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এস আর খেতান ও অনিল আগরওয়াল নামে দুই ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধেও। অনিল আগরওয়ালের নামে চলা সংস্থার বর্তমান মালিক বান্টি আগরওয়াল এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। এস আর খেতানের নামে চলা সংস্থাটির বর্তমান মালিক রামু আগরওয়াল আবার দাবি করেছেন যে তিনি ‘নির্দোষ’।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ এম আর ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক আব্দুল মালেক শুধু বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। তাই মন্তব্য করব না।”
এই কারবার চলার পিছনে সাধারণ গ্রাহকদের একাংশেরও ‘হাত’ আছে বলে রেশন ডিলারদের একাংশের দাবি। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রাহকদের অনেকেই আটার বিনিময়ে ডিলারের কাছ থেকে টাকা নেন। সেই কারণেই বরাদ্দ আটার একাংশ না নিয়ে ডিলারেরা ডিস্ট্রিবিউটরের থেকে টাকা নেন। তাতে তাঁদের মুনাফা হয়। আধিকারিকদের একাংশের মতে, এটা আসলে একটা চক্র। পশ্চিমবঙ্গ এম আর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের নদিয়া জেলা সম্পাদক রেজাউল করিমের দাবি, “ডিলারেরা সরাসরি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। আসলে শহরাঞ্চলে অনেক গ্রাহক আটা নিতে চান না। তাঁরা আটার বদলে টাকা চান। সংগঠনের তরফে সবাইকে আরও সতর্ক হতে বলব।”
নদিয়ায় রেশন দুর্নীতি নিয়ে আগে একাধিক বার সরব হয়েছেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। তাঁর দাবি, “জেলার বহু ডিস্ট্রিবিউটর আটাকল মালিকদের সঙ্গে মিলে উপভোক্তাদের বঞ্চিত করছেন। অনেক দিন ধরে অনেক তথ্য আমার কাছে আসছে। আমি ইডি এবং সিবিআই-কে জানাব। দিল্লিতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করব।” তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমানের পাল্টা দাবি, “ওঁর কাছে কী তথ্য আছে, জানি না। উনি যেখানে খুশি তা জমা করতে পারেন। তবে নদিয়া জেলা তথা পশ্চিমবঙ্গ রেশন নিয়ে কোনও দুর্নীতি নেই। সত্যি সমস্যা হলে সাধারণ মানুষ আমাদের তা জানাতেন।”
নদিয়া জেলাশাসক অরুণ কে প্রসাদকে একাধিক দিন ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy