Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
আল্লা মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই... এই প্রার্থনা এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও

গরমে দরদরিয়ে ঘামছে অন্তর্জালের দে-ওয়াল

বর্ষা নয়, দীর্ঘ দগ্ধ দিনে সে-ও ঘামতে থাকে। এই না-বৃষ্টির দমবন্ধ দুপুরে কিংবা ঘুম-নেই রাতে অন্তর্জালের ‘ওয়াল’-এ হাঁটু মুড়ে বসে চলছে বৃষ্টির প্রার্থনা। ফুটিফাটা মাঠের আলের ধারে সেই কবে বাংলার কৃষক আল্লার কাছে মেঘ, পানির সঙ্গে ছায়াও চেয়েছিল।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

‘দিনরাত স্ট্রাগল’ আর ‘মাথার ঘাম পায়ে ফেলা’— বহু বাঙালির বড় প্রিয় ‘ডায়ালগ’!

কিন্তু যাঁরা তেমন ‘স্ট্রাগল’ করেন না? জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে তাঁদেরও মাথার ঘাম পায়ের উপর টুপটাপ।

তামাম বঙ্গ হাসফাঁস করছে। ঘেমে উঠছে দেওয়াল। কিন্তু এ আর নতুন কী! কিনু গোয়ালার গলির নোনাধরা দেওয়াল তো চিরকালই ঘামে। টানা বর্ষায় পুরনো বাড়ির পলেস্তারা খসা দেওয়াল মনে পড়িয়ে দেয় আলতামিরার গুহা চিত্র।

কিন্তু দেওয়াল যখন ‘দে’ খসিয়ে ‘ওয়াল’ হয় তখন?

বর্ষা নয়, দীর্ঘ দগ্ধ দিনে সে-ও ঘামতে থাকে। এই না-বৃষ্টির দমবন্ধ দুপুরে কিংবা ঘুম-নেই রাতে অন্তর্জালের ‘ওয়াল’-এ হাঁটু মুড়ে বসে চলছে বৃষ্টির প্রার্থনা। ফুটিফাটা মাঠের আলের ধারে সেই কবে বাংলার কৃষক আল্লার কাছে মেঘ, পানির সঙ্গে ছায়াও চেয়েছিল। সেই প্রার্থনা আজও চলছে সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়াটস অ্যাপে। মজাদার, বুদ্ধিদীপ্ত ছড়া, ছবি আর কার্টুনে বৃষ্টি নামুক নাই বা নামুক দিবারাত্রি ‘কমেন্ট’, ‘লাইক’ ‘ওয়াও’-এর ঝড় বইছে।

চলন্ত গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। তার উপর লেখা—‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, গ্রীষ্ম গেছে খেপে’। ফেসবুকে পোস্টানোর মিনিট দু’য়েকের মধ্যে ঝেঁপে ‘লাইক’। সাতসকালে হোয়াটঅ্যাপ লোগোর উপরের লাল বৃত্তে লেখা ১২২। খুলতেই— ‘সারাদিন আনন্দে কাটুক, তাড়তাড়ি বৃষ্টি নামুক’ কিংবা ‘ভাই, একটু বৃষ্টি চাই’।

আরও পড়ুন: মার্কিন চাপেই ব্রাত্য কাতার, দাবি ট্রাম্পের

এই গরমেই একের পর এক বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে ফেসবুকে ঘুরছে— ‘সূর্য পড়াশোনায় খুব ভাল। দিন দিন তার ডিগ্রি বেড়েই চলেছে। বৃষ্টি খুব ফাঁকিবাজ। ভাল করে পড়তেই চাইছে না।’ লম্বা দড়ির ফাঁসে একখণ্ড কালো সজল মেঘকে টেনে নামানোর চেষ্টা করছে বাহুবলী। পাশে লেখা ‘আজ ব্যাটাকে নামিয়েই ছাড়ব।’ ল্যাপটপের কিবোর্ডে থাবা দিয়ে ‘সার্চ’ করেছে থ্যাবড়ামুখো কুকুর। নীচে লেখা ‘বৃষ্টির কোনও খবর নেই।’ সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলা হয়েছে—‘সন্ধান চাই। নাম— মেঘ, রং- কালো।’

গরমে নাজেহাল? মুক্তির উপায়ও জানাচ্ছে অন্তর্জালের সেই দে‘ওয়াল’। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বরফের চাঙড়কে পাশবালিশের মতো জড়িয়ে শুয়ে আছেন কেউ। কেউ আবার পুকুরের মধ্যে কাপড়ের দোলনা টাঙিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আর রসবোধ? লা জবাব! কাঁদো কাঁদো মুখে গোলগাল শিশু বলছে, ‘শীতকালে সবাই কম্বল বিতরণ করে। কিন্তু গরমকালে কেউ এসি দেয় না কেন?’ মুঠো পাকিয়ে কেউ বলছেন, ‘কী যুগ এলো রে বাবা! জামাকাপড় ধুতে ধুতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। আর পরলেই ভিজে যাচ্ছে।’

এই সব পোস্টের পাশাপাশি মিলছে কিছু অন্যরকম লাইন— ‘তপ্ত বেলা ব্যস্ত রোদের সাজে, ক্লান্ত শহর মিথ্যা শ্রাবণ খোঁজে।’ কিংবা মান্না দে-র জনপ্রিয় গানের অনুকরণে—‘শরৎ যদি না হয় রাজি, বসন্ত যদি না আসে। এই গরমে বর্ষা তুমি, থাকো বন্ধু আমার পাশে।’

ট্রলিব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কাঠব্যাঙ—‘অনেক হয়েছে। সহ্যের একটা সীমা আছে। চললুম দার্জিলিং। বর্ষার আগে আসব না।’ নাহ, ব্যাঙ এখনও ফেরেনি। কিন্তু পোস্টের নীচে ঝেঁপে ‘লাইক’ আর ‘কমেন্ট’। ভাগ্যিস, এ দেওয়ালে কেউ লিখে রাখে না— বিজ্ঞাপন নিষেধ!

অন্য বিষয়গুলি:

Facebook Hot Summer ফেসবুক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy