—ফাইল চিত্র।
আয়েসবাগের দুর্গামন্দিরের ঠিক উল্টো দিক দিয়ে চলে যাওয়া পাকা পিচ রাস্তার ওপর পম্পা দত্তের বাড়ি। ঝকঝকে বাড়িতে সদ্য রঙের প্রলেপ পড়েছে। জানালার কার্নিস, সানশেডের বিটে আকাশি আলো। বাইরের দেওয়ালে নকশা করা টাইলস্ বসানো। গোটা বাড়ি কালো কাচে ঘেরা। একতলা বাড়ি হলেও বাইরে থেকে দেখলেই বেশ আঁচ করা যায়, সে বাড়ির ভেতর কেমন হতে পারে। তবুও নাকি পম্পা দত্তের বাড়ি নেই। এমন পেল্লাই বাড়িটা সকলের চোখে পড়লেও চোখে পড়েনি নতুনগ্রাম পঞ্চায়েতের অ্যাসিসট্যান্ট এগজিকিউটিভের। তাঁর চোখে পড়েছে পম্পা দত্তের ‘কুঁড়ে ঘর’। আর সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রাপকের তালিকায় নাম উঠে এসেছে পম্পার।
পাড়া-পড়শি থেকে বিরোধী সকলেরই দাবি, এর পিছনেও স্পষ্ট হয়েছে ‘কাটমানির গল্প’। তাই ঝকঝকে বাড়ি হয়ে গিয়েছে কুঁড়েঘর! প্রতিবেশীরা জানান, আয়েসবাগের ওই বাড়িতেই স্বামী অসীম দত্ত এবং মেয়েকে নিয়ে থাকেন পম্পাদেবী। অসীম দত্ত ব্যবসায়ী। স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন ওই মহিলা। কিছু দিন আগে, পরিদর্শনে আসেন পঞ্চায়েতের এক জন আধিকারিক। পম্পার পাকা বাড়ি দেখেই তিনি আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পম্পার নাম উঠল কী করে? প্রশ্ন এখানেই। বৃহস্পতিবার, নতুনগ্রাম এলাকার বিজেপি মণ্ডল সভাপতি বিবেকানন্দ সরকার বলেন, ‘‘আয়েসবাগের পম্পা দত্তের পাকা বাড়ির কথা সকলেই জানেন। ওঁরা কিছু দিন আগে বাংলাদেশ থেকে এসে ওই বাড়ি করেছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরেই ওঁদের রমরমা। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি কুঁড়ে ঘর হয়ে গিয়েছে!’’ মুর্শিদাবাদ টাউন কংগ্রেসের সভাপতি অর্ণব রায় বলেন, "সবই কাটমানির ব্যাপার, ক্ষমতায় বসে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ক্রমাগত এই দুর্নীতি করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো এক প্রকার তা স্বীকার করে নিয়েছেন।’’
নতুনগ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পরিদর্শন করেন সুলতান মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘পম্পার বাড়ি দেখেই আমি আবেদন না-মঞ্জুর করেছিলাম। পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিসট্যান্টকে সে রিপোর্টও দিয়েছিলাম।’’ পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিসট্যান্ট চন্দ্রাণী দাস এ দিন বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আপনাকে কিছু বলব না, পারলে লিখিত অভিযোগ করুন।’’ নতুনগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ইউসুফ আলি খান বলেন, ‘‘পম্পা দলের কেউ নন। তালিকায় নাম এল কী করে তা-ও জানি না। তালিকা তো এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করেন।’’ মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘এমন তো হাওয়ার কথা নয়, এ ব্যাপারে দফতরের কেউ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ আর পম্পা? এ দিন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি তো আমার নয়, শ্বশুরের। তাই নিজের বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy