প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাড়ির উঠোনে সবে এসে পৌঁছেছে স্বামীর মরদেহ। কান্নার রোল উঠল গোটা বাড়িতে। স্বামীর মরদেহ বাড়ির উঠোনে রাখতেই পড়িমরি করে ছুটে এলেন বৃদ্ধা। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেন। পড়শিরা তখন তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। স্পর্শ করলেন স্বামীর দেহ। কাঁদতে কাঁদতে মৃত স্বামীর বুকে মাথা রাখেন তিনি। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান। তার পরই নিথর হয়ে গেলেন বৃদ্ধা! পরিজনেরা ভেবেছিলেন, শোকে মূর্ছা গিয়েছেন তিনি। জলের ঝাপটা দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও জ্ঞান ফেরেনি বৃদ্ধার। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক ডাকা হয়। তিনি এসে পরীক্ষা করে দেখেন নাড়ির স্পন্দন স্তব্ধ। স্বামীর দেহ আসার মিনিট তিনেকের ব্যবধানে মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানা এলাকায়। এমন ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিজন এবং প্রতিবেশীরা।
প্রায় পঞ্চাশের বছরের দাম্পত্য শঙ্কর মণ্ডল এবং নিয়তি মণ্ডলের। ৮৫ বছরের শঙ্কর এবং ৬৮ বছরের নিয়তির এক পুত্র এবং দুই কন্যা। সকলেই বিবাহিত। নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার তাঁদের। দীর্ঘ দিন ধরে বয়সজনিত অসুখে ভুগছিলেন শঙ্কর। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল তাঁর। দিন কয়েক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিবারের লোকজন তাঁকে ভরতপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন বৃদ্ধ। মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় শঙ্করের। দেহ বার করে উঠোনে রাখা হয়েছিল। শেষ বারের মতো স্বামীকে ছুঁতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিয়তি। কিন্তু আর ওঠেননি।
মঙ্গলবার রাতেই দম্পতির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে গ্রামের শ্মশানে। স্বামী-স্ত্রীর দেহ পাশাপাশি রেখে দাহ করেন পুত্র-কন্যারা।
একই দিনে পিতৃ এবং মাতৃহারা হওয়া অনন্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাবা-মাকে কোনও দিন আলাদা থাকতে দেখিনি। সব কিছুতেই দু’জনের মতামত এক ছিল। কখনও ঝগড়া হয়নি দু’জনের। বাবা আমাকে বকছেন। কিন্তু মা এসে আমাকে আগলে রাখছেন, এমনটাও হয়নি। এমনই ছিলেন ওঁরা। মৃত্যুও ওঁদের আলাদা করতে পারল না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কষ্ট হচ্ছে। তবুও কোনও একটা জায়গায় যেন শান্তি পাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy