চিকিৎসক পৌলোমি বিজয়পুরী। —ফাইল চিত্র।
রাতের বেলা হঠাৎই চিকিৎসকের বাড়িতে চিৎকার-চেঁচামেচি। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, আগে কখনও ডাক্তারের বাড়িতে এমন শোরগোল হয়নি। চিকিৎসক পিতার সঙ্গে তুমুল বাগ্বিতণ্ডা হয় চিকিৎসক কন্যার। তার কিছু ক্ষণ পর কান্নাকাটির শব্দ শুনে পড়শিরা ভিড় করেন মুর্শিদাবাদের কান্দির বিজয়পুরীদের বাড়ির সামনে। জানা যায়, ৩২ বছরের চিকিৎসক পৌলোমি বিজয়পুরী আত্মহত্যা করেছেন। মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখে তখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রবীণ চিকিৎসক প্রশান্ত বিজয়পুরী। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন স্ত্রী। অন্য দিকে, দিদির দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন ছোট ভাই। দিদি যে এমন একটা কাণ্ড করবেন, তা ভাবতে পারেননি উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া। কারণ, বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে দোতলার ঘরে উঠে গিয়ে ভাইয়ের কাছেই পৌলোমি খাবার খেতে চেয়েছিলেন। খাবার আনতে একতলার রান্নাঘরে গিয়েছিলেন ভাই। তার মধ্যেই সব শেষ!
কান্দির চিকিৎসকের রহস্যমৃত্যু নিয়ে নানা তথ্য উঠে আসছে। পরিবারের একাংশই জানাচ্ছেন, পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করতে বাধা দেওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন ৩২ বছরের পৌলোমি। অন্য দিকে, চিকিৎসক পিতার দাবি, মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সেখান থেকেই আত্মহত্যা। জানা যাচ্ছে, শুক্রবার রাতে পৌলোমি এবং প্রশান্তের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তার পর নিজের ঘরে চলে যান পৌলোমি। দিদিকে সামলাতে গিয়েছিলেন ভাই। তখন তাঁকে দিদি বলেছিলেন, খিদে পেয়েছে। ম্যাগি রান্না করে নিয়ে আসতে। কিন্তু খাবার নিয়ে দিদির ঘরে ঢুকে আঁতকে ওঠেন বছর সতেরোর ওই তরুণ। তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচিতে পরিবারের সদস্যেরা পৌলোমির ঘরে গিয়ে দেখেন সিলিং ফ্যানে ওড়না জড়িয়ে ঝুলছেন চিকিৎসক!
মুর্শিদাবাদের বহড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের আকস্মিক এবং অকাল মৃত্যুর জন্য পরিবারকে দায়ী করছেন প্রতিবেশীরা। কান্দি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়শির কথায়, ‘‘বাবার জেদাজেদির জন্য হাসিখুশি মেয়েটা এ ভাবে নিজেকে শেষ করে দিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ও ডাক্তার। প্রতিষ্ঠিত। নিজের পছন্দের কাউকে যদি জীবনসঙ্গী করতে চায়, তাতে অসুবিধে কী ছিল?’’ মৃত চিকিৎসকের পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে নিজেদের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে পৌলোমির বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। কিন্তু বিয়েতে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল চিকিৎসকের। অন্য দিকে, বাবাও নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। প্রবীণ চিকিৎসককে রাশভারী মানুষ হিসাবে চেনেন পরিচিতরা। মেয়ে পৌলোমি ঠিক তাঁর উল্টো। হাসিখুশি এবং মিশুকে স্বভাবের চিকিৎসক অবসর সময়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিতেন। অমলকৃষ্ণ রায় নামে এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করার জন্য জেদ ধরে বসেছিল পৌলোমি। নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন বাবাও। ওই নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে গোলমাল চলছিল বিজয়পুরী পরিবারে। হঠাৎ করেই কেমন যেন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল মেয়েটি।’’ দেহ উদ্ধারের সময় প্রশান্তবাবুর ভয়ে অবশ্য বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারেননি প্রতিবেশীদের কেউ। এক মহিলা প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘ডাক্তারবাবুর ছেলের চিৎকারে আমরা ছুটে গিয়েছিলাম। কিছু ক্ষণ পরে জানলাম, মেয়েটি আর নেই!’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন পৌলোমি। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে হাউস স্টাফশিপ এবং ইন্টার্নশিপ সম্পূর্ণ করে সরকারি চিকিৎসক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন বহড়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পৌলোমি যে মানসিক ভাবে কষ্টে ছিলেন, তা বুঝতে পারেননি বলে জানাচ্ছেন সহকর্মীরা। মৃত চিকিৎসকের এক বান্ধবী তথা চিকিৎসক আকাঙ্ক্ষার কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগে রক্তদান শিবিরে ও বিনামূল্যে রোগী দেখেছে। যে কোনও অনুষ্ঠানে কিংবা সামাজিক কাজে ওকে এক বার বললেই পাওয়া যেত। ক’দিন আগেই কথা হল। কী হল কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’’
চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার মাজিদ ইকবাল বলেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যার কারণে উনি আত্মহত্যা করেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy