প্রতীকী চিত্র
শমসেরগঞ্জের ভাঙন রোখার দায়িত্ব কার? তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের বলছেন, ‘‘ফরাক্কা ব্যারাজের জন্য গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙন হচ্ছে জেলায়। তাই তার দায় নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।’’ অন্য দিকে বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি সুজিত দাসের দাবি, ‘‘ফরাক্কা ব্যারাজের দায়িত্ব যত টুকু এলাকার, সে দায়িত্ব তারা পালন করবে। বাকি অংশের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। পুনর্বাসনের দায়ও রাজ্যের।’’ সুজিতবাবুর দাবি, ‘‘রাজ্য সে দায়িত্ব পালন করছে না।’’দুই দলের এই চাপান উতোরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শমসেরগঞ্জের ৪টি গ্রামের ভাঙন দুর্গতরা। রাজ্য সেচ দফতর ভাঙন আর হবে না বলে আশার কথা শোনালেও ভাঙন এখনও হচ্ছে মাঝে মধ্যেই। রবিবার ভাঙন দুর্গতদের জন্য ত্রাণ নিয়ে গিয়েও ধানঘড়া ও নিমতিতা স্কুলে দুর্গতদের ক্যাম্পে যেতেই পারেননি বিজেপির নেতারা। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘নিমতিতা স্কুলের শিবিরে ভাঙন দুর্গতদের খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তিন দিন থেকে। তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতেই সেখানে যাওয়া হচ্ছিল। উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলার দলীয় সভাপতি সঙ্গে ছিলেন। তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকরা লাঠিসোঠা নিয়ে বাধা দেয়। শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে বারণ করেন। ফলে ফিরে আসতে হয়।’’ বিপন্নের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতেও তৃণমূল এখন গুণ্ডামি করে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর। অন্য দিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘‘শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কার ভাঙনে ৭০০ পরিবার গৃহ হারিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য জেলা শাসকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।’’জেলা শাসকের সঙ্গে সোমবার দেখা করেন আবু তাহের ও আর এক সাংসদ খলিলুর রহমান সহ কয়েক জন নেতা।
তাহের বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার নীরব। বিজেপি নাটক করছে। বিরোধীরা ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে সরব হব লোকসভায়। ভাঙনের সব দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।’’
ভাঙন নিয়ে এই চাপান উতোর এই প্রথম নয়। দু’সপ্তাহ আগেও দফায় দফায় সব দলের সাংসদেরাই দেখতে আসেন শমসেরগঞ্জের গঙ্গা ভাঙন কবলিত এলাকা। আসেন বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু, তৃণমূলের দুই সাংসদ আবু তাহের ও খলিলুর রহমান, কংগ্রেসের বিধায়ক ইশা খান চৌধুরীও। বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের উদাসীনতাই এই ভাঙনের জন্য দায়ী। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে তাদেরই। অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের দাবি, ফরাক্কা ব্যারাজের জল ছাড়ার জন্যই এই ভাঙন। অথচ ভাঙনের দায় এড়িয়ে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলছেন তারা।
সকলেই ভাঙন পীড়িতদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহহারা ৭০০টি পরিবার ঘর হারিয়ে ত্রিপলের নীচেই দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ আত্মীয় পরিজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা অপূর্ব মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘দুর্গতদের কোনও ত্রাণের ব্যবস্থা আর নেই। এখনও ভিটে হারা পরিবারগুলির মাথা গোঁজার কোনও ব্যবস্থা হয়নি। এই ভাঙন রোধের দায়িত্ব কার তা নিয়েই সাংসদ ও বিধায়কেরা কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’ ভাঙন রোধে বালি বোঝাই বস্তা ফেলায় তার তীব্র সমালোচনা করেছেন সব দলের সাংসদেরাই। যদিও রাজ্য সেচ দফতরের রঘুনাথগঞ্জ ডিভিসনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্পরূপ পাল জানান, ভরা গঙ্গায় পাড় বাঁচাতে বাঁশের খাঁচায় বালির বস্তা ফেলাই ভাঙন রোধের উপায়। জল কমলেই স্পার পাথর দিয়ে বাঁধানো হবে।ফরাক্কা ব্যারাজের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘ডাউন স্ট্রিমে ৬.৯ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাঙন রোধের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারাজের। বিজেপির এক সাংসদ ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy