টোটো বন্ধ হওয়ায় আনাজ বিক্রি শুরু করেছেন চালক। নিজস্ব চিত্র
কানা বেগুন বেছে ওজন করা বা পাঁচটা মাছের থেকে পচা মাছটা সহজে চিনে ফেলা অভিজ্ঞতা হয়নি কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণী বাজারের আনাজ বিক্রেতা শেখর বিশ্বাস বা মাছ বিক্রেতা অনুপ হালদারের।
আসলে তাঁরা কেউই জাত ব্যবসাদার নন। তাঁদের এই ব্যবসার বয়স মাস খানেকেরও কম। তার আগে শেখর ছিলেন কলকাতা-হাওড়া রুটের বাসের কন্ডাক্টর। অনুপ ছিলেন কৃষ্ণনগর-করিমপুরগামী বাসের ড্রাইভার। লকডাউনে কাজ বন্ধ। ফুরিয়ে গিয়েছে জমানো টাকা। পেট চালাতে, সংসার চালাতে আনাজ-মাছ বিক্রি করছেন তাঁরা।
শেখর বলেন, ‘‘লকডাউনের দিন পাঁচেক আগে কৃষ্ণনগরে বাড়িতে আসি। কলকাতায় কাজে ফেরার মুখে লকডাউন। যা সঞ্চয় ছিল ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আনাজ বিক্রি করতে বসেছি ঘূর্ণী বাজারে।’’
ঘূর্ণীতেই লেপ-তোষকের দোকান সঞ্জীব বিশ্বাসের। লকডাউনে সে ব্যবসা বন্ধ। ঘরে চাল-ডাল বাড়ন্ত হওয়ায় সঞ্জীবও মাছ বিক্রি করতে শুরু করেছেন ঘূর্ণী বাজারে। তিনি বলেন, ‘‘মাছ ঠিক মতো কাটতে পারি না। অনেক খরিদ্দার ফিরে যাচ্ছেন।’’
কৃষ্ণনগরের টোটোচালক নন্দন হালদার এখন টোটোয় আনাজ চাপিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘‘১৫ দিন বাড়িতে বসে ছিলাম। চার জনের পেট। খাব কী? বাধ্য হয়ে আনাজ বিক্রি করছি। রোজ ডাল-ভাতে সংস্থান হয়ে যাচ্ছে।’’
তেহট্টের স্বর্ণশিল্পী সুশান্ত হালদারের দোকান বন্ধ। তিনি এখন টোটো চালিয়ে তেহট্টে হাসাপাতাল থেকে রোগী আনা-নেওয়ার কাজ করছেন। কালীগঞ্জের রাজেশ ঘোষ, ধুবুলিয়ার নিমতলায় সুব্রত ঘোষের চায়ের দোকান ছিল। লকডাউনে চায়ের দোকান বন্ধ। পেট চলছে আনাজ বিক্রি করে। রাজেশ তাঁর চায়ের দোকানেই আনাজ বিক্রি করছেন। রাজু এখন ধুবুলিয়া স্টেশন বাজারে আনাজ নিয়ে বসেছেন। ভাতজাংলার কালীপুরের ফুচকা বিক্রেতা এখন ফুচকা বেচার ভ্যানে আনাজ সাজিয়ে নিয়ে পাড়ায় বিক্রি করছেন। ফুলিয়ার তাঁতশিল্পী বৃন্দা বসাক সারাদিন বাড়িতে তাঁত বুনছেন। কিন্তু কাপড়ের বিক্রি নেই এখন। তাই হাত খরচের টাকা জোগাড় করতে বিকেলের পর পাড়ায় পাড়ায় চানাচুর, বিস্কুট ইত্যাদি বিক্রি করছেন। ফুলিয়ার মালিপোঁতা সর্দারপাড়ার গঙ্গা সর্দার এখন বরের সঙ্গে তাঁতের ‘সানা বোয়ার’ কাজ করছেন। তাঁর বর আগে মাঠে মুনিশ খাটতেন। গঙ্গা বাড়ির কাজ করতেন। বাধ্য হয়েই রোজগারের জন্য বরের সঙ্গে তাঁতের সানা বোয়ার কাজ করছেন গঙ্গা।
এ ভাবেই আরও কত মানুষ পেশা পরিবর্তন করে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন এই দুর্দিনে। সবার আশা সুদিন আসবে। আবার তাঁরা ফিরতে পারবেন তাঁদের চেনা পেশায়। চেনা ছন্দে...।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy