—ফাইল চিত্র।
মাস ছয়েক ধরে তেলেঙ্গানায় নির্মাণশ্রমিকের কাজ করছিলাম, বেশ ভালই মজুরি। থাকার জায়গা থেকে খাওয়া-দাওয়া কোনও অসুবিধে ছিল না। সবটাই চলছিল বেশ মসৃণ ভাবে। কিন্তু আমাদের মতো গরীবগুর্বের ভাল দিন স্থায়ী হয় না। হঠাৎ করেই এক দিন শুনলাম জনতা কার্ফু হবে। সেই সঙ্গে ছড়াতে তাকল নানান গুজব। তখনও ভাবিনি এক দিনের জনতা কার্ফু এমন লম্বা হয়ে মাসের পর মাস চলতে থাকবে। আমাদের রুজি-রুটি সব ছিনিয়ে নেবে। কখনও ভাবিনি গোটা দেশটা এমন থমকে যাবে। তবে, সময় যত গড়িয়েছে পরিস্থিতি ততই কঠিন হয়েছে। দিন যত গড়াতে তাকল ক্রমেই বাড়তে তাকল খাবারের সঙ্কট। আমাদের কর্মক্ষেত্র থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের বাজার যেতে গিয়ে গুনতে হয়েছে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকা অটো ভাড়া। তা ছাড়াও পুলিশের নানারকম হয়রানিও শুরু হল। ভেবে দেখলাম এ ভাবে মাসের পর মাস এখানে পড়ে থাকলে মরেই যাব।
ভাল বুঝতাম না, হাঁটতে দেখে পুলিশ তাই পেটাতে থাকল। সমস্যার কারণে অনেক সময় পুলিশের হাতে মার খেতে হয়েছে আমাদের। পকেটের টাকা ফুরিয়ে আসছিল, ফলে চিন্তাটা আরও বাড়ছিল। পরিবারের সদস্যরা ফোনে কান্নাকাটি শুরু করল, সে সময় নিজেকে সামলে রাখাটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল আমাদের। সামনেই ইদ আর তার আগেই এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ে মনটাও ভেঙে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল এ বার ইদে আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হবে না।
শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না দেখে পিঠের ব্যাগটা হালকা করে বেরিয়ে পড়লাম পায়ে হেঁটে। ভাষা বুঝতাম না ভাল। পুলিশ হাঁটতে দেখেই পেটাতে শুরু করল। মার খেলাম কী আর করব! ঘন্টা দশেক পথ পায়ে হেঁটে বুঝতে পারলাম এ ভাবে চলতে থাকলে পথেই মরতে হবে। পকেটে কিছু টাকা ছিল, ফলে বেশি ভাড়ার টোপ দিয়ে ট্রাকে চেপে সেখান থেকে পৌঁছলাম ওড়িশা, কিন্তু ওড়িশা পৌঁছে মনে হল আর ফেরার পথ নেই, শুরু হলো নতুন করে পথচলা। ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে পথের ধারের ধাবায় খেয়ে দিন গুজরান করছি আর ভাবছি বাড়ি পৌঁছানো হবে তো!
ধাবার সামনে থেকে আবারও মিলল গাড়ি, নগদ দু’হাজার টাকা দিয়ে পৌছালাম আমাদের রাজ্যের খড়্গপুরে। আর সেখান থেকেই কখনও পায়ে হেঁটে কখনও দুধের গাড়িতে কখনও কলার গাড়িতে চেপে পৌঁছলাম নদিয়ার তেহট্টে। সেখান থেকে টোটো চেপে নাজিরপুর, নাজিরপুর থেকে আবারও টোটো চেপে মহিষবাথান। আর তারপর বাড়ি থেকে সদস্যরা গিয়ে মোটর বাইকে করে নিয়ে এলো ঘরে। ঘরে ফিরে মনে হয়েছিল দ্বিতীয় জন্ম হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy