Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

‘হেঁটে ফেরার পথে গ্রামের মানুষ আতিথ্য দেন’

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারএক গ্রামীণ ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখালাম সে পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে ওষুধ দিল আর বলল এখন হাঁটবেন না সেখানে একরাত কাটাই একটি স্কুলে। 

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

কেশবচন্দ্র দাস
অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৭:১৭
Share: Save:

ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতাম ওড়িশা ভুবনেশ্বর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দুরে জগতসিংহপুর নামে একটি ছোট্ট শহরে। সেখানে মহাজন আছে তারাই থাকার ব্যবস্থা করে ও বিক্রি করার জন্য মাল দিয়ে থাকে। আমরা মহাজনের ঘরে থেকে ফেরি করি জামা কাপড়। সকালবেলা মহাজনের কাছে কাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রামে যেতাম বিক্রি করতে। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়িয়ে বিক্রি ভালই হোত। বিক্রি করে সন্ধ্যার সময় মহাজনের টাকা দিয়ে লাভের অংশ আমার থাকত। লাভের একটা অংশ বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম। আমার বাড়িতে মা ছাড়াও স্ত্রী পুত্র আছে।

আমার বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার অরঙ্গাবাদ। আমি বাড়ির ছোট ছেলে। ছোট থেকে দুরন্তপনা করে কাটিয়েছি। পড়াশোনা ঠিক মতো করিনি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাড়ি থেকে বাড়িতে কিছু না বলে দিল্লি চলে গিয়েছিলাম। সেখানে কোন কাজ না পেয়ে রিকশা ঠেলেছি। তারপর আবার বাড়ি চলে আসি। বাড়ি যখন এলাম তখন বাৎসরিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার পড়শোনা এখানেই শেষ। তারপর চায়ের দোকানে আড্ডায় দিন কেটেছে।

একদিন ট্রেনে হাওড়া হয়ে ওড়িশা চলে যাই। তারপর আমাদের পাড়ার পারভেজের সঙ্গে দেখা করে বলি আমাকেও একটা কাজ দাও। সে আমাকে মহাজনের সঙ্গে দেখা করিয়ে কয়েকটা প্যান্টের পিস ও জামার পিস দিয়ে আমাকে বলল এই এলাকায় ঘুরে এগুলো বিক্রি করতে হবে। দুশো টাকা লাভ করি। সেই থেকে আমি ওড়িশায়। অসুবিধায় পড়লাম লকডাউনে। লকডাউন শুরু হতেই মহাজন তার হিসাব বুঝে নিলেন। আমাদের কাছে সামান্য কিছু টাকা। ঠিক করলাম পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরব।

আমি আর আমার পাড়ার পারভেজ আলম দু জনে একটা ব্যাগে চিঁড়ে আর গুড় নিয়ে রিয়ে পড়লাম সকাল বেলা। প্রথম বাধা পেলাম ভুবনেশ্বরে। আমাদের কলা পাউরুটি খাইয়ে পুলিশ ছেড়ে দিল। হাঁটতে গিয়ে পয়ের তলায় ফোসকা পড়ে যায়। তিন দিন হাটার পর আর চলতে পারছিলাম না। পা ফুলে গিয়েছে শরীর ক্লান্ত মনে হচ্ছে আর বাঁচব না।

এক গ্রামীণ ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখালাম সে পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে ওষুধ দিল আর বলল এখন হাঁটবেন না সেখানে একরাত কাটাই একটি স্কুলে। গ্রামের মানুষ আমাদের কষ্ট দেখে ডাল ভাত খেতে দিয়ে ছিল। তাদের আতিথ্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। তারপর বাকি পথ পায়ে হেটেই পৌছায়। এখানে পঞ্চায়েতের কাছে কাজের আবেদন করেছি। যদি কাজ পাই তা হলে আপাতত কোথাও যাব না। নিজের গ্রামেই এখন থাকব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy