দিল্লি যাচ্ছে আম। গোবিন্দপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
দিল্লির ‘আম’ দরবারে নদিয়ার কদর ক্রমশ বাড়ছে। গুণগত মানে মালদহ, মুর্শিদাবাদের পাশে সসম্মানে স্থান করে নিয়েছে নদিয়া। সৌজন্যে, শান্তিপুরের হিমসাগর। আমবাঙালি মাত্রেই জানেন বেনারসের ‘ল্যাংড়া’, মালদহের ‘ফজলি’, মুর্শিদাবাদের ‘নবাবি’ আমের সঙ্গে পাল্লা দিতে শান্তিপুরের ‘হিমসাগর’ কতখানি সক্ষম। এই নিয়ে দুই বার দিল্লির জনপথ রোডে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আম-উৎসবে ডাক পাওয়া সেই উৎকৃষ্টতায় পাকাপোক্ত শিলমোহর দিল।
সোমবার, ৫ জুন থেকে দিল্লির জনপথ রোডের হ্যান্ডলুম হাটে শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহব্যাপী ‘বেঙ্গল ম্যাঙ্গো মেলা-২০২৩’। গত বছরের পর এ বার ফের নদিয়াকে বাছা হয়েছে। প্রধানত, হিমসাগরের জন্য। গত বছর দিল্লিতে বাছাই হিমসাগর নিয়ে গিয়ে আম উৎসবে বাজিমাত করেছিলেন নদিয়ার আম-চাষি গৌতম ভৌমিক। স্বাদে-গন্ধে বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল শান্তিপুরের হিমসাগর। এবারে নদিয়া থেকে চার জন আম-চাষি ডাক পেয়েছেন। প্রথম লপ্তে ইতিমধ্যে তিন হাজার কিলোগ্রাম আম দিল্লি চলে গিয়েছে। বাছাই হয়ে আছে আরও এক থেকে দেড় টন।
এই প্রসঙ্গে নদিয়ার উদ্যানপালন আধিকারিক হৃষিকেশ খাঁড়া বলেন, “রাজ্য সরকারের উদ্যানপালন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের যৌথ উদ্যোগে দিল্লির জনপথ রোডের হ্যান্ডলুম হাটে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল ম্যাঙ্গো মেলায় নদিয়া থেকে প্রধানত যাচ্ছে হিমসাগর। সেই সঙ্গে আম্রপালি এবং কিছু ল্যাংড়া। রাজ্যে উৎপন্ন বিভিন্ন আমের মধ্যে শান্তিপুরের হিমসাগর অন্যতম সেরা। তাই নদিয়া থেকে সিংহভাগ হিমসাগরই দিল্লি পাঠানো হয়েছে।” জানা গিয়েছে, নদিয়া ছাড়াও মালদহ, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা প্রভৃতি জেলা থেকে আম উৎপাদকেরা তাঁদের সংগ্রহের শ্রেষ্ঠ আম নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন।
নদিয়ার যে চার জন আম নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে গত বারের গৌতম ভৌমিক ছাড়াও রয়েছেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী, বিপ্লব দেবনাথ এবং রতন ভৌমিক।
এঁরা প্রত্যেকেই শান্তিপুরের দীর্ঘ দিনের বিশেষজ্ঞ আম উৎপাদক বলে পরিচিত। এঁদের মধ্যে অন্যতম গৌতমের রয়েছে নিজস্ব ১৫ বিঘা আমবাগান এবং লিজ় নেওয়া বাগান মিলে প্রায় ৩৫০টি আমগাছ। বাকি তিন জনের কারওরই শ’দুয়েকের কম আমগাছ নেই। গত দিনদশেক ধরে সেই সব গাছের আম নিয়ে প্রস্তুতি চলেছে দিল্লি আম উৎসবের। প্রতিটি আম আলাদা ভাবে দেখেশুনে বাছাই করা হয়েছে। তার পর সেগুলি বিশেষ এক বাক্সে ভরে পাঠানো হয়েছে দিল্লি।
গৌতম বলেন, “কয়েক বছর হল এই ধরনের বিভিন্ন উৎসবে হিমসাগর আম নিয়ে যাচ্ছি। এখন সকলেই জানেন নদিয়ার শান্তিপুরের মতো উৎকৃষ্ট মানের হিমসাগর আর কোথাও হয় না। ফলে, যেখানেই যাচ্ছে, সেখানেই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা হিমসাগর ছাড়া আর কারও মাথায় উঠছে না। এবারেও দিল্লিতে তেমনই ফলাফল হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।” নদিয়া থেকে যাচ্ছে ল্যাংড়া, গোলাপখাস এবং আম্রপালিও।
শান্তিপুরের হিমসাগরের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ ব্যাখ্যা করে আম-আগ্রহী সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “আম, তাঁতের পরই শান্তিপুরের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শান্তিপুরে প্রায় হাজার একর জমিতে আমের ফলন হয়। প্রধানত, মাটির কারণেই হিমসাগর এত ভাল হয়। সারা বছর পরিচর্যাও চলে।”
তাঁর তথ্য অনুসারে, নদিয়ায় প্রধানত দু’টি আম খুব ভাল মানের হয়— হিমসাগর এবং ল্যাংড়া। গোলাপখাস, ফজলিও কিছু কিছু হয়। প্রধানত শান্তিপুর, মাজদিয়া, ধুবুলিয়া, মুড়াগাছা, পলাশিপাড়া জেলার মূল আম উৎপাদক অঞ্চল।
এই রাজ্যে কম-বেশি ৮০ হাজার হেক্টরে আমের ফলন হয়। যার দুই-তৃতীয়াংশ হয় মালদহ ও মুর্শিদাবাদে। বাকি এক তৃতীয়াংশ আমের চাষ হয় নদিয়া, হুগলি এবং দুই চব্বিশ পরগনায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy