গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লাউডস্পিকারেই ছিল ফোন। এ পাশ থেকে যুবক বললেন, ‘‘দু’কার্টুন রিটার্ন আছে মামা।’’ উল্টো দিক থেকে রাশভারী গলায় উত্তর এল, ‘‘৩০ কাটা যাবে কিন্তু!’’ উত্তেজিত হয়ে এ পাশের যুবকের জবাব, ‘‘অসুবিধা নেই মামা, ৫০ কেটে তুলেছি। এখনও গন্ধ হয়নি।’’ ফোনের ও পার থেকে আবার উত্তর এল, ‘‘পাঠিয়ে দে। দেরি করিস না। খদ্দের আছে।’’
কথোপকথন শেষে হাসিমুখে বাইক নিয়ে গ্রামের গলিতে মিলিয়ে গেলেন বছর ত্রিশের যুবক। নাম আনিসুর আলি মোল্লা (নাম পরিবর্তিত)। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জলঙ্গির বাসিন্দা। যাওয়ার আগে আনিসুরই জানিয়ে গেলেন, ভোটের সময় আমদানি হওয়া অস্ত্র এখন ‘রফতানি’ করা হচ্ছে। যেখান থেকে অস্ত্র এসেছিল, আবার সেখানেই ফিরে যাচ্ছে! খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শুধু জলঙ্গিই নয়, গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়েই অস্ত্রের এই ‘উল্টো স্রোত’ দেখা যাচ্ছে। তার কারণ, পুলিশি ধরপাকড়! প্রশাসনের ‘দৌরাত্ম্য’ এড়াতে বাধ্য হয়ে ভোটের সময় কেনা অস্ত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন ক্রেতারা। যাঁরা কোনও না-কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। আনিসুর বলে গেলেন, ‘‘এই দু’কার্টুন (এক কার্টুন মানে ৩০টি পিস্তল) এখন পৌঁছে দিতে পারলেই আর কোনও চিন্তা নেই!’’
অস্ত্র কারবারিদের সূত্রেই খবর, বাংলাদেশ থেকে যে দামে অস্ত্র কিনে ক্রেতাদের বিক্রি করেছিলেন এ রাজ্যের জেলার কারবারিরা, এখন তার অর্ধেক দামে সেই অস্ত্র আবার কিনে নিচ্ছেন তাঁরা। তার পর আরও ৩০ শতাংশ কম দামে পৌঁছে যাচ্ছে ‘মূল উৎস’ বাংলাদেশে। তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক কারবারি বলেন, ‘‘ভোটের পর জেলায় অস্ত্রের চাহিদা একেবারেই নেই। যারা কিনেছিল, সকলেই এখন ফেরত দিতে চাইছে। বলছে, ‘এ জিনিস এখন রেখে কী করব! রাখলে বিপদ বাড়ছে।’ পুলিশের ভয়েই নিজেদের কাছে অস্ত্র রাখতে চাইছে না কেউ।’’ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, যে অস্ত্রগুলি এখন ফেরত যাচ্ছে, সেগুলি অবশ্য বারুদের ছোঁয়া পায়নি। তাই কিনে নিতে রাজি হচ্ছেন কারবারিরা।
তবে এই কারবার সম্পর্কে অবগত পুলিশ প্রশাসন এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে জেলা জুড়েই লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে বহরমপুর এবং জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা। সেই রকম একটি অভিযানেই সম্প্রতি শমসেরগঞ্জ থেকে ফরাক্কা সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে দু’টি অত্যাধুনিক পিস্তল, দু’টি দেশি পিস্তল এবং ৩০ রাউন্ড গুলি-সহ গ্রেফতার হয়েছেন দুই যুবক। জলঙ্গি সীমান্ত লাগোয়া ঘোষপাড়া গ্রাম থেকে ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠাতে গিয়ে আরও দু’জন ধরা পড়েছেন পুলিশের জালে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রে দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ইতিমধ্যেই অস্ত্রের ‘উল্টো স্রোত’ বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে। এক জেলা পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ধৃতেরা জেরায় স্বীকার করেছে, বাজেয়াপ্ত হওয়া অস্ত্রগুলি ভোটের সময় কেনা হয়েছিল। এখন ধরা পড়ার ভয়ে তারা সেগুলো বেচে দিচ্ছে।’’
বহরমপুর পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।’’ একই কথা বললেন জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ভিজি সতীশ। তিনিও বলেন, ‘‘কয়েক জনকে গ্রেফতার করে এই অস্ত্র কারবার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগ এই অস্ত্র কারবারি এবং সন্দেহভাজনদের উপর বিশেষ নজর রাখছে।’’ বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্যও বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র পাচার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য বিএসএফের হাতে আছে। মূলত ফেন্সিংহীন অঞ্চলগুলিতে এই অস্ত্র কারবার রুখতে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy