আগুন জ্বলল অশান্তির। পাঁচটি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে আগুন লাগানো হল। পুড়ল দু’টি ট্রাকও।
স্কুলেরই দেওয়া সাইকেল নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল মেয়েটা। স্কুলের কাছেই তাকে পিষে দেয় লরি।
শুক্রবার দুপুরে ফরাক্কায় ওই দুর্ঘটনার পরে প্রায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। স্কুলের ছাত্রদের সঙ্গে লাঠি-রড হাতে রাস্তায় নেমে পড়ে কিছু স্থানীয় যুবক। সাতটি বাস ও লরিতে ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়। মার খান যাত্রীরা।
পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আহত হন এসডিপিও (জঙ্গিপুর) ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষী। মেয়েটি যে স্কুলে পড়ত, সেই নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককেও নিগৃহ করা হয়। মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয় সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের। কয়েক জনকে আটক করা হলেও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
ফরাক্কা স্টেশনের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের নিউ ফরাক্কা মোড়ের কাছেই নিউ ফরাক্কা হাইস্কুল। এ দিন বেলা ২টো থেকে কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণির সংস্কৃত ও আরবি পরীক্ষা ছিল। ফরাক্কা ২ নম্বর নিশিন্দ্রা কলোনির রুম্পা হালদারও (১৭) সাইকেলে স্কুলে যাচ্ছিল। পৌনে ২টো নাগাদ স্কুলের কাছে নেমে সাইকেল নিয়ে হেঁটে সে রাস্তা পেরোতে যায়। আর তখনই মালদহের দিক থেকে আসা লরি পিষে দেয় তাকে।
প্রথমে পিছু হটলেও পরে বড় বাহিনী নিয়ে ফিরে এসে লাঠি চালাল পুলিশ। মধ্যে পড়ে মার খেল গোলাপি জামা পড়া ছাত্রেরাও।
দুর্ঘটনার খবর যেতেই স্কুল থেকে ছাত্রেরা ছুটে আসে। তাদের সঙ্গে জুটে যায় এলাকার কিছু যুবক। অবরোধ শুরু হয়ে যায়। দাঁড়িয়ে পড়া বাস- লরি ভাঙচুর করতে থাকে শতাধিক উন্মত্ত যুবক। যাত্রীরা আতঙ্কে পালাতে থাকেন। চারটি সরকারি বাস, একটি বেসরকারি বাস, দু’টি লরিতে আগুন দেওয়া হয়। একটি লরিতে ৩০টি মোটরবাইক উত্তরবঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আগুনে সব ছাই হয়ে যায়।
কাছে সৈয়দ নুরুল হাসান কলেজে পুলিশের পথ নিরাপত্তার সেমিনারে হাজির ছিলেন এসডিপিও (জঙ্গিপুর) প্রবীণ প্রকাশ, ফরাক্কা থানার আইসি সমীররঞ্জন লালা। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের দেখে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে জনতা, লাঠিও চালায়। বড় বাহিনী না থাকায় পুলিশকে প্রথমে পিছু হটতে হয়।
বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বিশাল বাহিনী নিয়ে চলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অনীশ সরকার ও এসডিপিও (লালবাগ) আজাহার তৌসিফ আহমেদ। বেগতিক বুঝে তাণ্ডবকারীরা পালাতে শুরু করে। কিছু ছেলে তখনও রাস্তায় ছোটাছুটি করছিল। পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়। গোলমালের মধ্যে পড়ে মার খেয়ে যায় কিছু ছাত্রও। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ছাত্রীর মৃতদেহ। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভাতে শুরু করে। বিকেল ৫টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, শুরু হয় যান চলাচল।
উন্মত্ত জনতাকে হটিয়ে দেওয়ার পরে মৃতদেহ তুলে নিয়ে গেল পুলিশ।
দমকলের তিনটি ইঞ্জিন এসে নেভাল বাস ও লরির আগুন।
নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মহম্মদ রিজুয়ানুল ইসলাম বলেন, “সহপাঠীর মৃত্যুতে ছাত্রেরা উত্তেজিত থাকলেও তাদের সামনে রেখে এই তাণ্ডব চালিয়েছে এলাকার কিছু দুষ্কৃতী। হামলাবাজেরা আমাদের ছাত্র নয়।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, তাণ্ডবকারীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। রাতেও ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy