মুর্শিদাবাদের ত্রিশঙ্কু দুই পুরসভায় বোর্ড গড়তে প্রয়োজনে তৃণমূল কিংবা বাম কাউন্সিলরদের হাত ধরবে বিজেপি। রবিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র সুভাষ মণ্ডল। শনিবার বহরমপুরে দলীয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরে সর্বসম্মত ভাবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। বিজেপি-র এই সিদ্ধান্তের কথা অজানা নয় কংগ্রেসের। ত্রিশঙ্কুর ‘দখল’ পেতে ময়দানে নেমেছে তারাও। বিধানসভা ভোটের দিকে চেয়ে, দলের স্বার্থ বুঝে অঙ্ক কষছেন সব দলের নেতারাই।
ভোটের ফল বেরোলেও কে আসবে ক্ষমতায়, তা জানার উৎকণ্ঠা জিইয়ে রেখেছে রাজ্যের বারোটি পুরসভা। তার মধ্যে রয়েছে জেলায় দু’টি পুরসভা— ধুলিয়ান, বেলডাঙা। রাজনৈতিক মহলের মত, এই দুই পুরসভার বোর্ড গড়তে বিজেপি-ই তুরুপের তাস। গত পুরভোটে জেলায় বিজেপির দখলে ছিল বেলডাঙা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড। এ বার শুধু এই পুরসভাতেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৩। ধুলিয়ান পুরসভায় ৪টি আসনে জিতেছে বিজেপি। এ ছাড়াও মুর্শিদাবাদে ২টি এবং জঙ্গিপুরে একটি আসনে জিতেছে দল। সব মিলিয়ে বিজেপি-র আসন বেড়ে হয়েছে দশ। চোদ্দো আসনের বেলডাঙা পুরসভায় কোনও দলেরই একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই। কংগ্রেস পেয়েছে ৭টি, বামেরা ৪টি। এখনই কংগ্রেস-বামেদের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা না থাকায় সেখানে বোর্ড গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বিজেপি। একই অবস্থা ধুলিয়ানেও। সেখানেও বিজেপি অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’।
দলের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বুঝে বিজেপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জেলায় দু’টি পুরসভায় জেতা (কান্দি এবং মুর্শিদাবাদ) কংগ্রেসকে সমর্থন করবে না বিজেপি। বরং রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল অথবা বামেদের বোর্ড গড়তে সাহায্য করবেন বিজেপি-র কাউন্সিলরেররা। কেন এখানে অন্য সমীকরণ? বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র সুভাষ মণ্ডলের ব্যাখ্যা, ‘‘জেলার দিকে চেয়েই এই সিদ্ধান্ত। মুর্শিদাবাদে বিজেপির প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেস। বেলডাঙা ও ধুলিয়ানে দলীয় কাউন্সিলারেরা তাই বোর্ড গঠনের ভোটাভুটিতে কংগ্রেস বিরোধী শক্তি বাম, তৃণমূলকেই সমর্থন করবে।’’
গত ২৯ এপ্রিল দলীয় নেতৃত্ব ও সদ্য বিজয়ী কাউন্সিলারদের নিয়ে বেলডাঙায় বৈঠকে বসেছিলেন মুর্শিদাবাদ (দক্ষিণ) জেলার সভাপতি মালা ভট্টাচার্য। তিনি জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে চেয়েই এই সিদ্ধান্ত। মুর্শিদাবাদ (উত্তর) জেলার সভাপতি ষষ্টিচরণ ঘোষের দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই কংগ্রেস ও তৃণমূল দু’টি দলের থেকেই ধুলিয়ানে সমর্থন চেয়ে প্রস্তাব এসেছে।’’ কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব প্রকাশ্যে অবশ্য তা মানতে চায়নি।
তবে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে বিজেপির হাত ধরে বোর্ড গড়া নিয়ে দ্বিধায় অন্য দলগুলি। কিন্তু, বোর্ড গড়তে বিজেপির সমর্থনও জরুরি! এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কৌশলী নেতারা। তাঁরা এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিজস্ব ঢঙে। ধুলিয়ানের ব্লক সভাপতি তৃণমূলের কাউসার আলি বলেন, ‘‘বিজেপি-র সঙ্গে সরাসরি বোর্ড গড়ার ক্ষেত্রে দলের সায় নেই। তবে দল ছেড়ে বিজেপি কাউন্সিলররা তৃণমূলে যোগ দিলে অন্য কথা।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের জবাব, ‘‘বেলডাঙা, ধুলিয়ানে পুরবোর্ড গড়ার মতো সংখ্যা বামেদের হাতে নেই। তাই কোনও বাম কাউন্সিলরই এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেবেন না বলে বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ বোর্ড গঠনে কংগ্রেস বা তৃণমূল কাউকেই সমর্থন করা হবে না, স্পষ্ট বলছেন তিনি। তবে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘বেলডাঙা, ধুলিয়ানে বৃহত্তম দল হিসেবে পুরবোর্ড গড়ার দাবি জানাবে কংগ্রেস। বিজেপি তো নয়ই, কারও কাছেই কোনও সমর্থন চেয়ে প্রস্তাব পাঠাবে না কংগ্রেস।’’
জেলার এক প্রশাসনিক কর্তা অবশ্য জানান, পুর নির্বাচনে বোর্ড গঠনের সময় বেলডাঙা নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না। কারণ ১৪ সদস্যের পুরসভায় ৭ সদস্য কংগ্রেসের। যদি বাম-বিজেপি পাল্টা প্রার্থীও দেয় তবে বোর্ড গঠনের ফায়সালা হবে টস করে। কিন্তু ধুলিয়ান নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কেন? এর উত্তরটা রয়েছে ধুলিয়ানের পুর রাজনীতির দলবদলের ইতিহাসে। কেমন?
ধুলিয়ানে একটি কাউন্সিলরও না জিতে ১৪ জন কাউন্সিলারকে দল ভাঙিয়ে এনে গত বছরেই পুরবোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। গত ৫ বছরে দলবদলের জেরেই ৪ বার পুরপ্রধান পাল্টেছে ধুলিয়ানে। ২৫ বছরে ১৪ জন পুরপ্রধান এসেছেন এখানে। ত্রিশঙ্কু ধুলিয়ান নিয়ে সংশয় আরও বেড়েছে প্রাক্তন পুরপ্রধান সফর আলির কথায়। এলাকায় প্রভাবশালী নেতা বলে পরিচিত সফর এ বার ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের প্রতীকে জিতেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের কাছে ধুলিয়ানে পুরবোর্ড গঠনের জন্য সব সম্ভাবনাই খোলা। কারণ দলের ৮ কাউন্সিলার রয়েছেন। উল্টো দিকে তৃণমূল, বিজেপি, নির্দল ও বাম মিলিয়ে রয়েছে ১৩ জন। বোর্ড গড়তে কংগ্রেসের প্রয়োজন মাত্র ৩ জন। ১৩ জনের মধ্যে ৩ জন জোগার করা কি খুব কষ্টের?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy