Advertisement
E-Paper

মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিয়ে বাঁচাতে ১০০ কিমি পথ পাড়ি

যে হাসপাতাল রোগীর ভিড়ে সব সময় গমগম করে, সেখানে তখন হাতেগোনা রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকজন

হাসপাতালের শয্যায় মোশারফ। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের শয্যায় মোশারফ। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২১ ০৭:৫০
Share
Save

হাসপাতালে প্রসূতিকে ভর্তির পরেই গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। শমসেরগঞ্জের অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকা ওই মহিলার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অবস্থার অবনতি হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু রক্তশূন্য ব্লাডব্যাঙ্ক।

শেষ পর্যন্ত মাঝরাতে শমসেরগঞ্জেরই এক যুবক জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিলেন প্রসূতি চেনতারা বিবিকে। আপাতত বিপদ কেটেছে তাঁর। হাসপাতালে একদিন তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখার পর ছেড়ে দেবেন ডাক্তাররা। চেনতারার বাড়ি শমসেরগঞ্জের চসকাপুর পুঁটিমারি গ্রামে। যিনি তাঁকে রক্ত দান করে বাঁচালেন সেই যুবকের বাড়িও শমসেরগঞ্জের বাবুপুরে। তবে দু’জনের কেউ কাউকে চেনেন না। করোনা আবহে গত কয়েক দিন ধরে ‘ঘরবন্দি’ মানুষ। পদে পদে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা। রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেও মেলেনি রক্তদাতার খোঁজ। চেনতারার ভাসুর সফিকুল ইসলাম জানান, প্রথমে সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। শনিবার অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হলে চেনতারা মৃত সন্তান প্রসব করেন। কিছুক্ষণ পর থেকেই তাঁর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। কিন্তু রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা নেই ব্লক হাসপাতালে। জঙ্গিপুর হাসপাতালে রক্ত পেয়ে যাবেন ভেবে বাড়ির লোক তাঁকে নিয়ে যান জঙ্গিপুরে। তবে শনিবার বিকেলে সম্ভাব্য বিধিনিষেধের ঘোষণা জেনে রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে গিয়েছিল। যে হাসপাতাল রোগীর ভিড়ে সব সময় গমগম করে, সেখানে তখন হাতেগোনা রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকজন। চিকিৎসকও জানিয়ে দেন দ্রুত রক্ত জোগাড় করতে হবে। নিরুপায় হয়েই শমসেরগঞ্জ থানার এক পরিচিত সিভিক ভলান্টিয়ারের দ্বারস্থ হন চেনতারার পরিবার। রাত তখন প্রায় ১০টা। সিভিক ভলান্টিয়ার যুবক ফোন করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়। সংস্থার কর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, “ফোন যখন পাই আমি তখন ঝাড়খণ্ডে। ওই প্রসূতির দরকার ছিল ও পজ়িটিভ গ্রুপের রক্ত। বহু খোঁজ করেও ওই গ্রুপের রক্তদাতার খোঁজ সেই সময় মেলেনি। যাঁদের ওই গ্রুপের রক্ত রয়েছে, তাঁরা সকলেই সম্প্রতি রক্ত দিয়েছেন।’’ এই অবস্থায় কোনও উপায় না দেখে ঝাড়খণ্ড থেকেই রওনা হয়ে যান মোশারফ। তাঁর রক্তের গ্রুপ ও পজ়িটিভ। এই অবস্থায় সব কাজ ফেলে ১০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সোজা জঙ্গিপুর হাসপাতালে ছুটে যান মোশারফ। রোগীর অবস্থা তখন সঙ্গীন।

চেনতারার স্বামী সামিরুদ্দিন বলছেন, “রক্তক্ষরণে স্ত্রীর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়েছিল অনেকটাই। রক্ত না দিলে চিকিৎসকরা ভরসা দিতে পারছিলেন না। আমরা অন্য একটি গ্রুপের রক্ত দিয়ে স্ত্রীর গ্রুপের রক্ত চেয়েছিলাম ব্লাড ব্যাঙ্কে থেকে। কিন্তু রক্তই নেই সেখানে। মাঝরাতে বড় অসহায় হয়ে পড়ে ছিলাম। ওই দাদা ঝাড়খণ্ড থেকে না এলে কী যে হত ভেবেই শিউরে উঠছি।’’চেনতারার পরিবার বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই যুবককে। মোশারফ জানান, রাস্তায় এক পুলিশ তাঁকে আটকে ছিলেন। কিন্তু সব শোনার পর তিনিও পিঠ চাপড়ে দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন।

Murshidabad Blood Donation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}