(বাঁ দিকে) পলাশিপাড়ার উৎসবে মাতলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মানিক ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট মানিক ভট্টাচার্যকে জামিন দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলায় এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই রীতিমতো উৎসবে মাতলেন নদিয়ার পলাশিপাড়ার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। বিলি করা হল মিষ্টি। উড়ল সবুজ আবিরও। প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক। তৃণমূলের এই ‘উৎসব’ নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করেছে বিরোধী বাম এবং বিজেপি।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর মানিককে গ্রেফতার করেছিল ইডি। ইডির হেফাজত শেষ হওয়ার পর গত ২৩ মাস প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। জামিনের মামলায় নিজেই সওয়াল করেন মানিক। বৃহস্পতিবার বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের একক বেঞ্চ পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ককে জামিন দেয়। সংবাদমাধ্যমে মানিকের জামিনের খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই বার্নিয়া থেকে পলাশিপাড়া, সাহেবনগর থেকে সাহাপাড়া— সর্বত্র উচ্ছ্বাসে মাতেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের দলীয় পতাকা হাতে নিজের নিজের এলাকায় মিছিল করেন স্থানীয় কর্মীরা। বার্নিয়া এলাকায় মিছিলের নেতৃত্ব দেন নদিয়া জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ প্রণয় ঘোষ চৌধুরী। তাঁর নেতৃত্বে মানিক ভট্টাচার্যের ছবিতে মালা পরিয়ে, সবুজ আবির নিয়ে বিশাল মিছিল করেন দলের নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে একে অপরকে মিষ্টিমুখও করিয়ে দেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরা। কর্মীদের এই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসকে স্বতঃস্ফূর্ত বলে দাবি করেছেন জেলার তৃণমূল নেতারা।
তৃণমূল নেতা প্রণয় এই প্রসঙ্গে বলেন “আমাদের বিধায়ক মানিকবাবুকে বিজেপি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল, উনি একদিন ঠিক মুক্তি পাবেন। উনি এলাকায় যা উন্নয়ন করেছেন, তা এখানকার জনগণ কোনওদিন ভুলবে না। এত দিনে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। দলে দলে নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। যা উৎসবের চেহারা নিয়েছে।”
কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস রাজ্যের শাসকদলকে আক্রমণ করে বলেন, “দুর্নীতির দায়ে প্রায় দু’বছর জেলবন্দি থাকার পর শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য। তৃণমূল তাঁকে স্বাধীনতা সংগ্রামীর মর্যাদা দিয়ে বরণ করছে। এটা শুধু নিন্দার না, গোটা সমাজের কাছে লজ্জার।” সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সদস্য সুবোধ বিশ্বাসের কথায়, “আরাবুল ইসলাম, মদন মিত্রের পর মানিক ভট্টাচার্য। দুর্নীতিগ্রস্তদের বরণ করে নেওয়া তৃণমূলের সংস্কৃতি। এটা গোটা রাজ্যের জন্য লজ্জার।”
তবে রাজনীতির কচকচানির বাইরে অকাল উৎসবে বেজায় খুশি পলাশিপাড়া বিধানসভা এলাকার ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় আবির বিক্রেতা সুধীর বিশ্বাস বলেন, “প্রায় তিন বস্তা সবুজ আবির দীর্ঘ দিন পড়েছিল। এখন ভোটও নেই। আবির নষ্ট হচ্ছিল। মানিকবাবুর কল্যাণে অন্তত আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচলাম।”
বৃহস্পতিবার বেলা গড়াতেই স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলি থেকে নিমেষে বিক্রি হয়ে যায় রসগোল্লা, কালাকাঁদ। সব মিষ্টি বিক্রি হয়ে যায় খুশি বিক্রেতারাও। স্থানীয় মিষ্টি বিক্রেতা আশিস পাল বলেন, “গরমের সময় রাতের মিষ্টি নিয়ে একটু চাপ থাকে। দুপুরের পরে তার স্বাদ নষ্ট হতে থাকে। বাজার মন্দা, প্রত্যেক দিন অনেক মিষ্টি ফেলে দিতে হচ্ছে। আজ ফেলে দেওয়া তো দূরে থাক, দিয়ে সামাল দিতে পারছি না। শুনলাম বিধায়ক সাহেব মুক্তি পেয়েছেন। তাই তাঁর দলের নেতাকর্মীরা উদ্যাপন করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy