Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
দুয়ারে ২১

রুটের বাসে না, লোক যাবে কিসে

এ বার ছবিটা বুঝি খানিক বদলে গিয়েছে। দলীয় নেতারাই মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে কিঞ্চিৎ কোনঠাসা যেন তৃণমূল।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:২৯
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রায় বিনাযুদ্ধে জয়লাভের পরে দলের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়েছিলেন। তার কয়েক মাস পরে ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশে যাওয়ার উৎসাহ ছিল তুঙ্গে।

সে বার রাস্তাঘাট ফাঁকা করে বেসরকারি বাসের পাশাপাশি রিজার্ভ বাস, ছোট গাড়ি, মিনি ট্রাক ছুটেছিল ধর্মতলায় সমাবেশে। ট্রেনেও লোকজন গিয়েছিলেন প্রচুর।

এ বার ছবিটা বুঝি খানিক বদলে গিয়েছে। দলীয় নেতারাই মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে কিঞ্চিৎ কোনঠাসা যেন তৃণমূল। নবাবের জেলার তিনটি আসনের মধ্যে দু’টি দখল করেছে শাসকদল। তা সত্ত্বেও রাজ্যে বিজেপির উত্থান, জঙ্গিপুর-সহ জেলায় গেরুয়া শিবিরের ভোট বৃদ্ধি, অধীর চৌধুরীর লোকসভায় পদপ্রাপ্তি, সর্বোপরি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের মাঝে এ বারে শহিদ দিবসে গত বারের চেনা ছবির কি কোনও বদল হবে?

শাসকদলের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও, আড়ালে আবডালে বলছেন, লোকসভা ভোটে জেলায় দল ভাল ফল করলেও রাজ্যে দলের অবস্থা ভাল নয়। এই পরিস্থিতিতে ২১ জুলাই নিয়ে গতবার যে উন্মাদনা ছিল এ বারে তা নেই। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস অবশ্য বলছেন, ‘‘গত বারের মতো এ বারেও জেলা থেকে ১ লক্ষ মানুষ শহিদ সভায় যোগ দেবেন। বাস, ট্রেন, ছোট গাড়ি করে কর্মীরা যাবেন।’’

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এর আগে কখনও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কেউ জয়ী হয়নি। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনের মধ্যে দু’টি আমাদের দখলে এসেছে। আমাদের ভোট বেড়েছে। ফলে গতবারের তুলনায় এ বারে লোক বেশি যাবে। এ বারে প্রায় আড়াই হাজার ছোট গাড়ি, ৫০০ বাসের পাশাপাশি ট্রেনে করে লোকজন শহিদ সভায় যাবেন।

তৃণমূল ৫০০টি বেসরকারি বাস নেওয়ার কথা বললেও বাস মালিকেরা জানান, এখনও সংগঠনের কাছ থেকে তাঁরা বাস চাওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে দু-একটি বাস নিতে পারে। কিন্তু গত একুশের মতো তেমন দৌড়ঝাঁপ নেই।

জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল সাহা বলছেন, ‘‘রুটের বাস এখনও নেওয়ার কথা আমাদের বলা হয়নি। যা মনে হচ্ছে ওঁরা ‘রিজার্ভ বাস’ ভাড়া নিচ্ছেন।’’ দলীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন রুটে প্রায় ৬৫০টি বাস চলাচল করে। গত বছর ২১ জুলাইয়ের সভাতে প্রায় ৫০০টি বেসরকারি বাস রুট থেকে তুলে নিয়েছিল। যার ফলে সমস্যায় পড়েছিলেন জেলার বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। সে বার তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য বেসরকারি বাস নেওয়ার সংখ্যা কমিয়ে বলা হয়েছিল আড়াইশো।

এক বাস মালিক ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘তৃণমূলের সমাবেশের জেরে মানুষ দুর্ভোগে পড়েনি গতবার শাসকদলকে এমনটাই দেখাতে হয়েছিল। ফলে সে বার বাস নেওয়ার সংখ্যা কমিয়ে বলতে হয়েছিল। কিন্ত এ বারে মানুষের দুর্দশার থেকেও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে লোকবল দেখানো। বিজেপি ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা হল, এখনও বাস ভাড়াই চায়নি তৃণমূল।’’ যদিও জেলা তৃণমূল নেতা সুবোধ দাস বলছেন, ‘‘শহিদ দিবসের জন্য এ বারে এক লক্ষ ব্যাজ ছাপানো হয়েছিল। সবই ব্লক স্তরে বিলি করা হয়েছে। জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষ শহিদ সমাবেশে যাবেন।’’ তাঁর দাবি, মালিকদের সংগঠনের কাছ থেকে এক লপ্তে বাস নেওয়া হয়নি।

ডোমকল-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সভায় ছোট গাড়ি বেশি যাচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ি তো রয়েছেই। ডোমকলের এক নেতা বলছেন, ‘‘দিদির সভায় যোগ দেওয়ার পরে দিঘা মন্দারমণি ঘুরে দেখার ইচ্ছা রয়েছে। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো দিঘা মন্দারমণি যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে রেখেছি।’’ কয়েক দিন আগে বহরমপুরে কর্মীসভায় এসে তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী বেচারাম মান্না দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, কলকাতার সভা শেষে দিঘামুখী না হয়ে কর্মীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরবেন। জেলার এক নেতা বলছেন, ‘‘বলতে হয়, তাই বেচারাম মান্না বলেছিলেন। কিছু লোক তো সভা শেষে এদিক-ওদিক ঘুরতে যাবেনই। কিভাবে তাঁদের যাওয়া আটকানো যাবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Berhampore TMC 21 July
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy