সভার প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।
ঠিক ৩ বছর ৭ মাস ২৫ দিনের মাথায় রানাঘাট বাণী সঙ্ঘের মাঠে জনসভায় অংশ নিচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি রানাঘাটে সভা করেছিলেন। ওই দিন ‘বিজেপিকে বাংলা ছাড়া করা’র ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই ডাক রানাঘাট লোকসভায় কোনও ম্যাজিক দেখাতে পারেনি। উল্টে তৃণমূলের দখল থেকে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি বিজেপির দখলে গিয়েছে।
শুধু তাই নয়, গত বিধানসভা নির্বাচনেও রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমার ৮টি বিধানসভা কেন্দ্রেই পদ্মফুল ফুটেছিল। পরবর্তীতে অবশ্য শান্তিপুর বিধানসভা উপ-নির্বাচনে মাধ্যমে তৃণমূলের দখলে আসে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে আজ শনিবার রানাঘাটে জনসভা করছেন অভিষেক। সভার দিকে চোখ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
দেড় মাস আগে থেকেই জনসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব। এক দিকে দলের অন্দরে গোষ্ঠী কোন্দল, অন্য দিকে বিজেপির জোরালো উপস্থিতি— এর মধ্যে থেকে মতুয়া ভোটারদের কতটা নিজেদের দিকে টেনে অভিষেকের সভায় মাঠ ভরানো যাবে, তা নিয়ে দলের অন্দরে সংশয় আগে থেকেই রয়েছে।
তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, দেড় মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষ্ণনগরে জনসভা করেছিলেন। অথচ, সেই সভার প্রস্তুতির তুলনায় অভিষেকের সভার প্রস্তুতির মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। দলীয় সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় আশানুরূপ লোক হয়নি। এর কারণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলেই মনে করা হচ্ছে। একই পরিস্থিতি যাতে অভিষেকের সভায় না হয়, তার জন্য জেলা নেতৃত্ব এ বার মরিয়া।
তবে প্রকাশ্যে দলীয় কোন্দল বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ‘‘এক লক্ষের বেশি মানুষ সভায় উপস্থিত থাকবেন। সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫০০-র বেশি বাস ভাড়া করা হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সভা মাঠ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী তিনটি মাঠে জায়েন্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সভাটি যেহেতু রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে হচ্ছে তাই জেলার উত্তরে থাকা দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা এ দিনের সভায় থাকছেন না।’’
রানাঘাটেই কেন সভা করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেন, নদিয়ার দক্ষিণাংশে একটা বড় এলাকা মতুয়া-অধ্যুষিত বলে পরিচিত। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মতুয়া মন জয় করতেই ময়দানে নামতে চাইছে তৃণমূল। ভোটের আগে এই এলাকায় নিজেদের জমি পুরোপুরি উদ্ধারের তাগিদ যেমন আছে শাসকদলের, তেমনই বিধানসভা জয়ের পর পঞ্চায়েতেও এখানে পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া বিজেপি। যে কারণে মতুয়া ভোট এখানে পঞ্চয়েত ভোটে অন্যতম নির্ণায়ক বিষয় হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূল-পন্থী মতুয়া সংগঠনের জেলা সভাপতি তথা তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান প্রমথরঞ্জন বসু বলেন, ‘‘মতুয়ারা সবসময় আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তাঁরা আমাদের দিকেই থাকবেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, আমাদের নজর এখন সে দিকে রয়েছে।’’ আবার বিজেপি-পন্থী মতুয়া সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমনি অধিকারীর কথায়, ‘‘২০১১ সালে মতুয়াদের কাঁধে ভর দিয়ে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতা এসেছিল। নাগরিকত্বের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময় সুর চড়িয়েছিলেন তিনি এখন নাগরিকত্বের প্রধান বিরোধী মুখ। তাই মতুয়া সমাজ তৃণমূলের সঙ্গে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy