পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। ছবি সংগৃহীত।
প্রায় এক দশক আগে তাঁর হাত ধরেই রানাঘাট পুরবোর্ডে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। ‘দলবিরোধী কার্যকলাপ’-এর অভিযোগে রানাঘাটের সেই প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমান পুরপ্রশাসক এবং নদিয়া জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়কে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিল তৃণমূল। দলের অন্দরে এবং রানাঘাট শহরে নিজের ডাকনাম বাবু নামেই যিনি পরিচিত। তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন এমন একটা জল্পনা জেলার রাজনৈতিক মহলে সম্প্রতি চলছিল। তার জেরেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার দুপুরেই জেলা তৃণমূলের তরফে চিঠি দিয়ে জেলার সহ-সভাপতিকে তাঁর পদ থেকে সরানোর কথা জানানো হয়। তাঁকে দলের কর্মসূচি থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে এ দিন পার্থসারথীবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমাকে কেন সহ-সভাপতি করা হয়েছিল আর কেনই বা সরানো হল জানি না। সে দিনও খুশি ছিলাম না, আজও অখুশি নই। আমি কী দলবিরোধী কাজ করেছি জানি না। দলের সব কর্মসূচিতেই অংশ নিয়েছি।” বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আমি তো এখনও দলেই আছি।’’ জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর দীপক বসু বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ আসছিল। উনি কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য।” এর পাল্টা রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে ওঁরা যদি কম্বলের লোম বাছতে বসেন তা হলে কম্বলটাই আর থাকবে না।’’
ঘটনাচক্রে এ দিন বিকেলেই শান্তিপুর এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি-সহ বেশ কিছু কর্মী তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য, আরবান্দি ২ পঞ্চায়েতের দুই সদস্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন জগন্নাথ সরকার। পরে সাংসদ বলেন, ‘‘ভোটের আগে তৃণমূল দলটাই আর থাকবেনা। যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে চান তাঁরা বিজেপিতেই আসবেন।’’ শান্তিপুর ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি সুব্রত সরকারের মন্তব্য, ‘‘ যাঁরা দল ছাড়লেন তাঁরা মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাই এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’
পর্থসারথীবাবুকে দলের সাম্প্রতিক সাংগঠনিক রদবদলে সহ-সভাপতি পদে আনা হয়েছিল। তবে রানাঘাট শহরে দলের সভাপতির পদে তাঁর বিরোধী শিবিরের লোককেই বসানো হয়। পাশাপাশি শহর লাগোয়া রানাঘাট ১ ব্লকের সভাপতি পদে তাঁর ঘনিষ্ঠকে সরিয়ে বসানো হয়েছে তাঁর বিরোধী শিবিরের লোককেই। যুব- তৃণমূলের রানাঘাট শহরের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন পার্থসারথীর ছেলে কামনাশিস চট্টোপাধ্যায়। রদবদলে সরতে হয়েছে তাঁকেও।
১৯৯০ সালে প্রথম বার রানাঘাটে কংগ্রেসের টিকিটে কাউন্সিলার হন পার্থসারথীবাবু। ১৯৯৫ সালে হন পুরপ্রধান। ২০০৯ সালের শেষের দিকে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন একাধিক কাউন্সিলার নিয়ে। ফলে বোর্ডে ক্ষমতার হাতবদল হয়। ২০১০ সালের পুরভোটে কংগ্রেসকে হারিয়ে জেতে তৃণমূলই। ২০১১ সালে রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভার বিধায়ক হন তিনি। তবে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে হেরে যান কংগ্রেসের শঙ্কর সিংহের কাছে। পরে অবশ্য শঙ্কর সিংহও তৃণমূলে যোগ দেন।
রানাঘাট শহর তৃণমূলের সভাপতি বদলের পর শহরে দলের ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মিসভায় ডাক না পেয়ে ক্ষোভ গোপন রাখেননি তিনি। আবার মুখ্যন্ত্রীর সফরের আগে দলের একটি প্রস্তুতি সভাতেও দেখা যায়নি তাঁকে। দলের মধ্যে ক্রমশ তাঁর বিরোধী শিবিরের হাতে সংগঠনের কর্তৃত্ব চলে যাওয়ায় কিছুটা হলেও কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy