সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ল গুলি ছোড়ার দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র
বিজেপি নেতার উপর হামলার ঘটনায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের অন্যতম, আগে নিহত ব্লক তৃণমূল সভাপতি দুলাল বিশ্বাসের ছেলে বাপ্পা বিশ্বাস। দুলালের স্ত্রী প্রীতিলতা বিশ্বাস বর্তমানে বগুলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। গ্রেফতার হয়েছে বাপ্পার দুই সঙ্গী রাহুল প্রসাদ এবং শানু সমাদ্দারও। আরও কয়েক জনকে পুলিশ খুঁজছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই বাপ্পা দলবল নিয়ে হামলা চালিয়েছিল বিজেপির ৩৮ নম্বর জেলা পরিষদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তিলক বর্মণের উপরে। জেরার মুখে বাপ্পা জানিয়েছে, তিলকের এলাকায় একটি মন্দিরে দুলাল বিশ্বাসের ছবি ছিল। লোকসভা ভোটের পরে সেই ছবি সরিয়ে দিয়েছে তিলক। সেটাই মেনে নিতে পারেনি সে। তাই এই হামলা।
যদিও এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের ধারণা, বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের দখল সংক্রান্ত গন্ডগোলের জেরেই এই হামলা। লোকসভা ভোটের পরেই বিজেপির লোকজন গিয়ে ওই কলেজে ঢুকে নরেন্দ্র মোদীর ছবি টাঙিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে টানাপড়েন চলছেই। বিজেপির তরফে তিলকের বড় ভূমিকা রয়েছে। অনেকেরই দাবি, সামনে এবিভিপি থাকলেও পিছনে মূল চালিকাশক্তি তিলকই।
আবার টিএমসিপিও কলেজের দখল ফিরে পেতে চাইছে। সামনে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক রনি দত্ত থাকলেও পিছন সক্রিয় ছিল বাপ্পা। বিজেপির একাংশের দাবি, তিলকের কারণেই বাপ্পা পুরোপুরি কলেজের দখল নিতে পারছিল না। তিলককে সরিয়ে দিতে পারলে কাজটা সহজ হয়ে যাবে বলে তারা মনে করছিল।
বাপ্পার বাড়ি বগুলা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে ভায়না এলাকায়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বুধবার রাতে বাপ্পা দলবল নিয়ে তিলকের এলাকায় হাজির হয়। প্রথমে বাঘা যতীন মোড়ে মোটরবাইক রেখে হেঁটে তারা তিলকের বাড়ির দিকে এগোয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, বাড়ির পাশে বিদ্রোহী সঙ্ঘের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিলক। একেবারে কাছে এসে শূন্যে গুলি চালায় বাপ্পা। সকলে চমকে সরে গেলে তিলককে লক্ষ্য করে সে গুলি চালায়। কিন্তু গুলি গায়ে লাগেনি। অতিরিক্ত মদ্যপান করে থাকার কারণেই সে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বলে পুলিশের ধারণা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে পুলিশকে জানিয়েছেন, গুলি ফস্কে যাওয়ার পরে সাত-আট জন মিলে তিলককে ঘিরে ধরে পিস্তলের বাট দিয়ে মারতে থাকে। তিলকের গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলিও ছোড়ে। তিলকের সঙ্গে থাকা বিজেপি কর্মী সৌরভ বিশ্বাস ঠেকাতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। গুলির শব্দ ও চিৎকারে ছুটে আসেন এলাকার লোকজন। ক্লাবের ছেলেরাও বেরিয়ে আসে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বাপ্পা শূন্যে একাধিক গুলি চালায়। এর পরে রক্তাক্ত তিলক ও সৌরভকে ফেলে তারা বাঘা যতীন ক্লাবের মোড়ের দিকে চলে যায়। সেই সময়েও শূন্যে ও মাটিতে তারা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। এমনকি মোটরবাইকে চেপে ফিরে যাওয়ার সময়ে বগুলা বাজারে, কলেজের সামনে, হাসপাতাল মোড়ে তারা গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি।
গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই এলাকার বহু মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। বিজেপি কর্মীদের পাশাপাশি তাঁরাও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। জনতার একটা অংশ ভায়নায় বাপ্পার বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু পুলিশের বিশাল বাহিনী তাদের আটকায়। এর পরেই বগুলার একাধিক তৃণমূল নেতার বাড়িতে হামলা শুরু হয়। প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমানে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শশাঙ্ক বিশ্বাসের বাড়িতেও হামলা হয়। বাড়িতে ছিলেন শশাঙ্কের ভাইপো, বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিমল বিশ্বাসের স্ত্রী ও ছেলে। তাঁদের অভিযোগ, বিজেপির লোকেরা বাড়িতে ইট ছুড়তে থাকে। পরে তারা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান পলাশ বিশ্বাসের বাড়িতেও ইট-পাটকেল ছোড়ে, ভাঙচুর চালায়।
হামলা হয়েছে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য কল্যাণ ঢালির বাড়িতেও। তাঁর স্ত্রী রত্না ঢালি বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁরা কেউই বাড়িতে ছিলেন না। শ্রীকৃষ্ণ কলেজের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক রনি দত্তর বাড়িতেও হামলা হয়। বগুলা বাজারে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশ খানিক ক্ষণ দিশাহীন হয়ে পড়েছিল। বিশাল বাহিনী গিয়ে কোনও মতে রাতের মতো পরিস্থিতি সামাল দেয়।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের উত্তজনা ছড়ায়। কৃষ্ণনগর-দত্তফুলিয়া রাস্তা প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রখে বিজেপি। রাতেই বগুলা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তা প্রায় সর্বাত্মক হয়েছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কথায়, “বাপ্পা যে ভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছে, গুলি চালিয়েছে, তাতে আমরা শঙ্কিত। এটা মেনে নিলে আগামী দিনে টিকতে পারব না।”
তবে বাপ্পার মা প্রীতিলতার দাবি, “আমার ছেলে এমন করতে পারে না। ওর মতো দেখতে কেউ করে থাকতে পারে।’’ সিসি ক্যামেরায় যে বাপ্পাকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে? তাঁর দাবি, “ওটা বানানো, ওকে ফাঁসানোর জন্য।” ব্লক তৃণমূল সভাপতি কল্যাণ ঢালির দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তবু বিজেপি আমাদের নেতাদের বাড়ি-বাড়ি হামলা চালালো। দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করল! ওরা বগুলায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।’’
রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের পাল্টা দাবি, “এই হামলার ঘটনার সঙ্গে বিজেপি জড়িত নয়। চোখের সামনে এত বড় ঘটনা ঘটতে দেখে মানুষই স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে এটা করেছে।” পুলিশ জানায়, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy