ছবি- ইন্দ্রাশিস বাগচী
লকডাউনের তৃতীয় পর্বে শুরু হয়ে গিয়েছিল ভিন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ ট্রেনের আনাগোনা। মুর্শিদাবাদও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ৬ মে থেকে ২ জুন, শুধু বহরমপুর স্টেশনেই এসেছে ছ’টি ট্রেন। কোনওটি মহারাষ্ট্র থেকে, কোনওটি দিল্লি, তেলঙ্গানা, মথুরা কিংবা কেরল থেকে। কিন্তু ভিন রাজ্যে আটকে পড়া জেলার ভূমিপুত্রদের তুলনায় সেই সব ট্রেনে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা ভারী ছিল পড়শি রাজ্য এবং প্রতিবেশী জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের। স্বাস্থ্য কর্তারা মনে করছেন, জেলায় এক লহমায়, পনেরো দিনে ২ থেকে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় তিন অক্ষরে পৌঁছে যাওয়ার পিছনে এটাও একটা কারণ। কেননা সেই সব ট্রেনে পড়শি রাজ্যের সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে উপসর্গহীন কোভিড আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কত ছিল তা বোঝার উপায় ছিল না। তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের সংস্পর্শে এসে ওই দেড়-দু’দিনের যাত্রা পথেই সংক্রমণ ঘটেছে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের।
পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক দিনে মহারাষ্ট্র থেকে তিনটি এবং মথুরা, দিল্লি, তেলঙ্গনা, রাজস্থান এবং কেরল থেকে আসা ওই ট্রেনগুলিতে মুর্শিদাবাদ জেলার পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল সাকুল্যে ২ থেকে আড়াই হাজার। ট্রেনের বাকি প্রায় সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক পড়শি রাজ্যগুলির, ঝাড়খণ্ড, অসম, বিহারের সেই সব যাত্রীদের প্রাথমিক কোভিড পরীক্ষা হয়েছিল বহরমপুর স্টেশন এবং স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে তাঁদের বাসে অন্যত্র পাঠানো হয়। উত্তরবঙ্গগামী ১০টি ট্রেনও হল্ট করেছিল ফরাক্কা স্টেশনে। সেগুলিতে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল মেরেকেটে সাড়ে সাতশো। বাকি সবই অসম এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘এই জেলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা যত না করোনাভাইরাস বয়ে এনেছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি সংক্রমণের সম্ভাবনা সঙ্গে করে এনেছেন ওই বিপুল সংখ্যক পড়শি রাজ্যের শ্রমিকেরা। কিন্তু সরকারি নিয়মিবিধি মেনে তাঁদেরও পরীক্ষা আমাদেরই করতে হয়েছে। সংক্রমণ তাঁরাও কিছু কম ছড়িয়ে যাননি।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘একেকটি ট্রেনে নানা এলাকার যাত্রী ছিলেন। এমনকি, পড়শি রাজ্যেরও। তাঁরা কী অবস্থায় ছিলেন, তা আমরা জানি। তাঁদের থেকে মুর্শিদাবাদের কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় কী করে!’’ বহরমপুরে আসা ওই সব ট্রেনে পড়শি জেলা পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া, মালদহ এমনকি হুগলিরও বহু যাত্রী ছিলেন। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, সেই সহযাত্রীদের থেকেও সংক্রামিত হতে পারেন ঘরমুখো জেলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
পরিযায়ী স্পেশ্যালের যাত্রী, সালারের প্রশান্ত খাঁ বলেন, ‘‘ট্রেনে সামাজিক দূরত্ববিধি মানা হয়নি। তা সম্ভবও ছিল না। অনেকেই মাস্ক পরে ছিলেন না। স্যানিটাইজ়ারের হাত ধোয়ারও কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ফলে ভিন রাজ্যের ওই সহযাত্রীদের থেকে আমাদের মধ্যেও যে সংক্রমণ ছড়ায়নি, তা কে বলতে পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy