বিক্রি হচ্ছে কাপড়ের মাস্ক। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
কোন মাস্ক ভাল, কতটা ভাল সে প্রসঙ্গে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের এসোসিয়েট প্রফেসর সৌগত বর্মন বলেন, "ভাইরাস ঠেকানোর ক্ষেত্রে এন ৯৫ , আর সার্জিক্যাল মাস্ক দুটোই ৯৫% কার্যকরী ভূমিকা নেয়।" তিনি আরও বলেন, "সার্জিক্যাল মাস্কে বিভিন্ন ঘনত্বের তিনটি পলি প্রিপিলিন স্তর ভাইরাসের ক্ষেত্রে ছাঁকনির কাজ করে। কিন্তু কোনও ভাবেই ভিজে যাওয়া মাস্ক পরা যাবে না বলেই জানান তিনি। কারণ ভিজে গেলে মাস্কের মধ্যে ছিদ্রগুলো বড় হয়ে যায়। সার্জিক্যাল মাস্ক প্রতি ৪ ঘণ্টায় পাল্টাতে হবে। আর একবারই ব্যবহার করা যাবে বলেও জানান তিনি। এন ৯৫ মাস্কের ক্ষেত্রে একটি মাস্ক ৪৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায় বলেও বলেন তিনি।
তবে বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন সার্জিক্যাল মাস্কের গুণগত মান কতটা সেটা দেখে নিয়েই মাস্ক কেনা উচিত বলেও পরামর্শ তাঁর । তিনি বলেন, "দেশি বিদেশি বেশ কিছু সংস্থা সার্জিক্যাল মাস্কের গুণগত মান নির্ধারণ করার কাজ করেন। মাস্ক কেনার সময় সেগুলোর কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করেই কেনা ভাল।" একটি মাস্কের থেকে দুটি মাস্ক পরলে তা বেশি কার্যকরী, মত তাঁর।
সার্জিক্যাল মাস্কের পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে কাপড়ের প্রিন্টেড মাস্কেরও, জানা গেল বেশ কিছু বিক্রেতা থেকে উৎপাদকের কাছে। বিশেষ করে মহিলাদের কাছে প্রিন্টেড কাপড়ের মাস্কের চাহিদা এখনও বেশি বলেই জানালেন অনেক বিক্রেতা। সার্জিক্যাল মাস্ক একবার ব্যবহার করা যায়, কিন্তু বিভিন্ন রঙের ছাপা কাপড়ের মাস্ক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কেচেও পরা যায় বলে সেই মাস্কের একটা চাহিদা আগাগোড়া রয়েছে।
এর মধ্যে বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণের কারণে সরকার থেকে মাস্ক বাধ্যতামূলক করে দেওয়ায় নিয়ম রক্ষা করার জন্য গেঞ্জি কাপড়ের সস্তার ১০ টাকা দামের মাস্কও কিনছেন কিছু ক্রেতা। সেগুলো বিক্রিও বেড়েছে বলে জানালেন কল্যাণীর এক বিক্রেতা। অনেকে একটা সার্জিক্যাল মাস্কের সঙ্গে একটা কাপড়ের মাস্ক ব্যাবহার করছেন। সে ক্ষেত্রে ছেলেরা ফিতে দেওয়া ত্রি স্তরের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার বেশি করেন, মেয়েরা করেন নানা রঙের ছাপা কাপড়ের মাস্ক।
রানাঘাটের মাস্ক ব্যবসায়ী সমীর দাস যেমন বললেন, " সার্জিক্যাল মাস্কের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় এখন মানুষ কাপড়ের মাস্ক বেশি নিচ্ছেন। কারণ এই মাস্ক বার বার ব্যবহার করা যায়।" তবে কাপড়ের মাস্কেরও দাম কিছুটা বেড়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, " ক'দিন আগে যে মাস্ক বিক্রি করতাম ৮ থেকে ১০ টাকায়, এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫ টাকায়।" বিভিন্ন প্রকার ভেদে কাপড়ের মাস্ক ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকার মধ্যে সাধারণত পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি করতে গিয়ে দামাদামি নিয়ে একটু সমস্যায়ও পড়ছেন খুচরো বিক্রেতারা, এমনটাই মত কারও কারও। কৃষ্ণনগরের সমীর দাস যেমন বলেন, " কয়েক দিনে দাম বেড়ে ১৫, ২০ টাকার মাস্ক ২৫ টাকা ৩০ হয়েছে। ক্রেতারা অনেকেই তা দিতে চাইছেন না।"
মাস্কের চাহিদা বাড়াকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে মাস্ক বিক্রি করতেও শুরু করেছেন কেউ কেউ। উৎপাদকের মুখেও হাসি ফুটেছে। মাস্ক প্রস্তুতকারক আশিস ঘোষ বলেন, "ঘরে মাস ছয়েক ধরে ৩০ হাজার গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক পড়ে ছিল। বিক্রি হবে না ধরে নিয়েছিলাম। সপ্তাহ খানেক আগে সব মাল বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এখন মহিলাদের জন্য ছাপা কাপড়ের মাস্ক বানাচ্ছি। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার মাস্কের চাহিদা আছে। কিন্তু এত বানানো সম্ভব হচ্ছে না।" কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কাপড়ের মাস্কের দাম একটু বেড়েছে একথাও জানালেন আশিস।
তবে কাপড়ের মাস্ক ভাইরাস আটকানোর ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী সে প্রসঙ্গে চিকিৎসক সৌগত বর্মন বলেন, "ত্রি স্তর বিশিষ্ট বা পাঁচ স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক পরা উচিত।" কাপড়ের মাস্কের ভাইরাস আটকানোর ক্ষমতা সার্জিক্যাল মাস্কের থেকে কম, তাই কাপড়ের মাস্কের নীচে একটা সার্জিক্যাল মাস্ক পরার পরামর্শও দেন তিনি। সব কিছুর শেষে একটা কথা বার বার মনে করিয়ে দিয়ে সৌগত বাবু বলেন," দুই দিকের মানুষকেই মাস্ক পরতে হবে। কম করে ৬ ফুট দূরত্ব রাখতে হবে। মাস্কে হাত দেওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। মাস্কের সামনের দিকে মোটেই স্পর্শ করা যাবে না।" এ সব মানলে তবেই সার্থক হবে মাস্ক পরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy