যাত্রীদের হয়রানি। নিজস্ব চিত্র
জেলায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হল না বৃহস্পতিবারেও। বাসের সংখ্যা কম থাকায় অনেকে বাইক বা অটোতেই সওয়ার হয়েছেন। অফিসযাত্রী ছাড়াও যাঁরা অন্য কাজে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছেন, তাঁরাও বাস কম থাকায় চাপাচাপি করে এক বাসে উঠতে বাধ্য হয়েছেন। তাতে সামাজিক
দূরত্ববিধি মানা যায়নি।
বহরমপুর থেকে লালবাগ যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন জেসমিনারা খাতুন। ভিড় বাসে না উঠে তিনি ভাইয়ের বাইকে ওঠার আগে বলে গেলেন, “এই ভিড়ে উঠে মরব নাকি! তার থেকে বাইকে যাওয়া এখন নিরাপদ।” বাস ছাড়া উপায় নেই দেখে ইসলামপুরের সাকিব আলি বললেন, “বাস কখন আসছে কখন আসছে না তার ঠিক নেই। যা পেলাম তাতেই উঠলাম। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গেলে বাড়ি যাওয়া হবে না।”
লকডাউন শিথিল হয়েছে ৮ জুন। খাতায় কলমে শুরু হয়েছে বাস চলাচল। অথচ তা হাতেগোনা কয়েকটি। বাস মালিক সংগঠনের হিসাব অনুয়ায়ী লকডাউনের আগে গোটা জেলার বিভিন্ন রুটে প্রায় ছ’শো বাস চলাচল করত। এখন সেখানে মেরে কেটে দেড়শো থেকে দু’শো বাস চলছে সেই সব রাস্তায়।
জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি বাস চলাচল করত বহরমপুর থেকে সাগরপাড়া, ইসলামপুর ডোমকল ভায়া করিমপুর এই রুটে। প্রায় দেড়শো বাস এই রুটেই চলাচল করত স্বাভাবিক অবস্থায়। এখন সেই সংখ্যা ৪০ থেকে পঞ্চাশে এসে নেমেছে। ওই রুটের এক বাস মালিক বাস মালিক শান্তনু সাহা বলেন, “৭০ থেকে ৮০ দিন পর বাস রাস্তায় নামাতে গেলে দেখা যাচ্ছে কোনও বাসের চাকা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কোনওটার ব্যাটারি বসে গিয়েছে, কোনওটার ইঞ্জিনে গোলমাল। সেগুলোকে সারিয়ে পুনরায় বাস চালু করার মত আর্থিক সামর্থ্য আমার মতো অনেকের নেই। ফলে এখুনি এখুনি সব বাস রাস্তায় নামানো সম্ভব হচ্ছে না।”
পাশাপাশি করোনা আতঙ্কে বাসে চাপার ভীতি থাকায় অনেক বাস এড়িয়ে চলছেন। ফলে কমযাত্রী থাকার অভিযোগে অনেকেই বাস চালাতে চাইছেন না। আর এক বাস মালিক কুন্তল মণ্ডল বলেন, “এত দিন বসে থাকার পর বাস রুটে নামাতে গেলে ন্যূনতম একটা খরচের প্রয়োজন। বাসে যাত্রী কম থাকায় সেই খরচ উঠছে না। ফলে যা নামিয়েছি, তাও বোধহয় তুলে নিতে হবে।” এ ছাড়া বাস মালিকদের অভিযোগ, ডিজেল পেট্রলের প্রতিদিন দাম বৃদ্ধি, ইনসিওরেন্সের প্রিমিয়াম বেশি হওয়া, বাস চালক ও তার সহযোগীদের বেতন খোরাকি দিয়ে বাস মালিকদের প্রতিদিন এক থেকে দু’হাজার টাকা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে খরচ না ওঠায় তাঁরা রাস্তায় বাস নামাতে পারছেন না।
মুর্শিদাবাদ বাস ওনার্স কাউন্সিলের সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, “বহরমপুর থেকে ন্যূনতম ৫০ কিলোমিটার বাস চালালে আমাদের একহাজার থেকে দুহাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। কলকাতা শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে সেটা হয়ে যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজন থাকলেও সেটাই সব নয়।” তিনি বলেন, “তেলের সেস যদি প্রত্যাহার করে দুই সরকার, তা হলে ভাড়া না বাড়িয়ে কিছুটা সামাল দেওয়া যায়। এইরকম চলতে থাকলে সাধারণ মালিকদের টিকে থাকার ক্ষমতা থাকবে না।” ছোট গাড়ির রমরমা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, “যদি সময় মতো বেশি সংখ্যায় বাস চলাচল করে সেই সব রাস্তায় তাহলে অন্য পরিবহণের সুযোগ পাওয়ার কথাই নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy