মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের গোলমালে ‘বহিরাগতেরা’ জড়িত কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। প্রশাসনের খবর, প্রাথমিক তদন্তে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বহিরাগত হাঙ্গামকারীদের সম্পর্কে বিশেষ তথ্য পাননি। অশান্তির ঘটনায় শ’তিনেক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই স্থানীয়। তবে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছেন না তাঁরা। পুলিশের খবর, কারা ওই গোলমালের সময় মুর্শিদাবাদে ছিল এবং বাইরে থেকে এই ঘটনার কলকাঠি কারও হাতে ছিল কি না, তা খুঁজতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। মূলত ওই সময়ে শমসেরগঞ্জ এবং তার আশেপাশে সন্দেহভাজনরা কাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেই গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।
গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, ‘সেল টাওয়ার ডাম্পিং’ বলে একটি প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে। এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনও এলাকায় ক’টি ফোন এসেছে এবং ক’টি ফোন করা হয়েছে তা খুঁটিয়ে দেখা হয়। তবে যেহেতু কোনও এলাকায় একাধিক টাওয়ার থাকায় এবং বহু মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী থাকায় প্রচুর তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়। এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, ‘‘কার্যত তথ্যের গন্ধমাদন থেকে বিশল্যকরণী খুঁজে বের করার কাজ। তথ্যের ভান্ডার যত বিরাট হয়, ততই বিশ্লেষণ করতে সময় লাগে।’’
গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, চুরি, ডাকাতি, খুনের মতো ঘটনায় মূল ঘটনার আগে এবং পরের কিছুক্ষণের তথ্য দেখা হয়। কিন্তু এই ধরনের গোলমালে দু’দিনে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ওই তল্লাটে বহু ফোন হয়েছে। তাই তথ্যের ভান্ডার এ ক্ষেত্রে বিরাট। এক গোয়েন্দাকর্তা বলছেন, ‘‘ ওই দু’দিনে যদি বিদেশ বা ভিন রাজ্যের কোনও ফোন নম্বরে একাধিক ফোন গিয়ে থাকে, তা হলে এই অশান্তিতে বহিরাগত মদত আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই নম্বরের মালিককেও চিহ্নিত করতে হবে।’’ তবে যদি কোনও অ্যাপ মারফত ফোনালাপ হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে কী ভাবে চিহ্নিত করা হবে, তা খোলসা করতে চাননি গোয়েন্দারা।
‘বহিরাগত’ তত্ত্বকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তারও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন গোয়েন্দাকর্তারা। কেন্দ্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ অফিসারের দাবি, এই অশান্তিতে প্রাথমিক ভাবে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন এবং তার নেতাদের নাম উঠে এসেছে। ওই সংগঠনের সঙ্গে বিদেশের মৌলবাদী শক্তির যোগাযোগ আগেই মিলেছিল। তাই ওই সংগঠন এই অশান্তির ষড়যন্ত্রে কত দূর জড়িত এবং তাদের বিদেশি মদত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে গোয়েন্দাদের একাধিক সূত্র দাবি করছে, এই অশান্তিতে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে একাধিক স্থানীয় নেতা এবং জনপ্রতিনিধিও আছেন। সেই সংক্রান্ত কিছু ভিডিয়ো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে পৌঁছেছে। কিছু সিসি ক্যামেরার তথ্যও রাজ্য পুলিশের হাতে এসেছে। যদিও পুলিশের একাংশের দাবি, ওই জনপ্রতিনিধিরা গোলমাল থামাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দাবি কতদূর সত্য, তা নিয়ে প্রশ্ন আছেপুলিশের অন্দরেই।
এই অশান্তির মধ্যেই জাফরাবাদে বাবা-ছেলের খুনের ঘটনাতেও পুলিশ সক্রিয় হয়েছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার মূল চক্রী স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছেন। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে। কী কারণে খুন তা নিয়েও এখনও নিশ্চিতনয় পুলিশ।
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যে ভাবে খুন করা হয়েছে তাতে কোন আক্রোশ কাজ করেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকেও বিশেষ তথ্য পাননি তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় আরও জনা কুড়িকে সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেওপুলিশের দাবি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)