প্রতীকী ছবি।
এ বার কার পালা? কার নামে এবার ছড়িয়ে পড়বে করোনা আক্রান্ত হওয়ার মতো রটনা? এই আতঙ্কেই রাতের ঘুম ছুটেছে কৃষ্ণনগর জেলা সদর শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের। কারণ গত কয়েক দিনে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক মিষ্টি ব্যবসায়ীদের নামে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর রটেছে শহর জুড়ে।
ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, এতে তাঁদের উপর যেমন প্রবল মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে তেমনই ভয়ঙ্কর ভাবে প্রভাব পড়েছে তাঁদের ব্যবসাতেও। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে খরিদ্দাররাও সেই সব দোকানমুখো হতে চাইছেন না। অসহায় মিষ্টি ব্যবসায়ীরা তাই শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমের। বাধ্য হয়ে সেখানেই তাঁরা পাল্টা প্রচার করে নিজেদের করোনা আক্রান্ত না হওয়ার বিষয়টি মানুষের সামনে তুলে ধরছেন।
প্রথমে এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে তাঁর করোনা হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হয়। তিনি তেমন গুরুত্ব দেননি। হাসতে হাসতে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কারণ ফোনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। সকলেরই একটাই প্রশ্ন। আস্তে আস্তে গোটা শহরেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাঁর করোনা আক্রান্ত হওয়ার মতো ভুয়ো খবর। শুধু তাই নয়, লোকের মুখে রটতে থাকে যে তাঁর দোকান, বাড়ি সিল করে দিয়েছে প্রশাসন। পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছে কোভিড হাসপাতালে। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। তিনি একা কত জনের কাছে গিয়ে সত্যিটা জানাবেন? হু হু করে কমতে থাকে খরিদ্দার। বিক্রি কমতে কমতে দশ শতাংশে নেমে আসে। যাঁরা মিষ্টি কিনতে আসছিলেন তাঁরাও কিছুটা নিছকই কৌতুহল দেখানোর ভঙ্গিতে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাল্টা প্রচার শুরু করেন। পাশাপাশি বাজার করতে আসা লোকজনও নিয়মিত দোকান খোলা দেখে সত্যিটা বুঝতে পারেন। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি। উদয়ন মোদক নামে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ওই তিন চারটে দিন যে আমাদের গোটা পরিবারের উপর দিয়ে কী মারাত্মক ঝড় বয়ে গিয়েছে সেটা আমরাই জানি। ফোনের পর ফোন আসছে। কেমন যেন পাগল পাগল লাগছিল সেই সময়।’’
সেই ধাক্কা সামাল দিতে না দিতে বাসস্ট্যান্ডের কাছে আরেক ব্যবসায়ী সাধন নন্দীরও সেই একই অবস্থা। প্রথমে বন্ধুরা, তারপর একে একে পরিচিতজনেরা তাঁর কাছে জানতে চান যে তিনি সত্যিই করোনা আক্রান্ত কি না। এরপর আনন্দময়ীতলা এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী তাপস দাস। রবিবার সকাল থেকে তাঁর কাছেও সেই একই ফোন আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। জনে জনে তাঁর কাছে ফোন করে জানতে চাইছেন সত্যিই তিনি করোনায় আক্রান্ত কি না। এমনকি মিষ্টি কিনতে এসে খরিদ্দাররা পর্যন্ত জানতে চাইছেন যে প্রকৃত ঘটনাটা কী। তাপসবাবু বলছেন, ‘‘আস্তে আস্তে ব্যবসায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভয়ে খরিদ্দার কমতে শুরু করেছে। ফোন এলেই মনে হচ্ছে এই বুঝি আবারও একই প্রশ্ন করবে কেউ। আতঙ্কের পর্যায়ে পৌঁছে
গিয়েছে বিষয়টা।’’
কিন্তু কারা করছে এমনটা? কেনই বা করছে? মিষ্টি ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ মনে করছেন পেশাগত রেষারেষি জায়গা থেকেই এমনটা প্রচার করা হতে পারে। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির যুগ্ম সম্পাদক গোকুল সাহা বলেন, ‘‘বিষয়টা অত্যন্ত উদ্বেগের। এমনটা চলতে দেওয়া যায় না। আমরা প্রাশাসনের সঙ্গে কথা বলব যাতে এই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কড়া শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হয়।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy