জনসভায় শুভেন্দু। মঙ্গলবার ফুলিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
কখনও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনার দিনের ভিডিয়ো সামনে ধরলেন। আবার কখনও ডাক দিলেন বিরোধীদের একজোট হয়ে প্রতিরোধের। মঙ্গলবার ফুলিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে জনসভা করতে এসে তৃণমূল নেতাদের নাম করে গত পঞ্চায়েত ভোটে বুথ দখল এবং রিগিংয়ের অভিযোগ তুললেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
গত মঙ্গলবার ফুলিয়ায় শান্তিপুর ব্লক অফিসের সামনের মাঠে নির্বাচনী প্রচারের জনসভায় হাজির ছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। মোবাইল ফোনে একটি ভিডিয়ো দেখিয়ে তিনি দাবি করেন, “এটা ২০১৮ সালের ভোট গণনার দিন রানাঘাটের ছবি। এখানে দেখা যাচ্ছে, তৎকালীন বিধায়ক সমীর পোদ্দার এবং আনন্দ দে কী ভাবে গণনা কেন্দ্র থেকে বিজেপি এজেন্টদের বের করে দিচ্ছেন এবং বিজেপির ছাপ দেওয়া ব্যালট ফেলে দিচ্ছেন। ছাপ দিচ্ছেন ব্যালটে।”
বার বার চেষ্টা করেও রাত পর্যন্ত সমীর পোদ্দার বা আনন্দ দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রাতে এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “ওই ভিডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করা হয়নি। তা যদি সত্যিই হয়, এত দিন বিজেপি কেন ওই ভিডিয়ো ক্লিপ নিয়ে মামলা করেনি? ওরা তো কথায়-কথায় হাইকোর্টে যায়।” তাঁর কটাক্ষ, “২০১৮ সালে শুভেন্দুবাবু নিজে কোন দলে ছিলেন? তা হলে কি শুভেন্দুবাবু এ সব করিয়েছিলেন— এই প্রশ্নটা তো থেকে যাচ্ছে।”
ঘটনাচক্রে, এ দিন শুভেন্দু যখন এই অভিযোগ তুলছেন, মঞ্চে হাজির ছিলেন বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে শুধু শুভেন্দু নন, পার্থসারথীও তৃণমূল ছিলেন। ছিলেন রানাঘাটের পুরপ্রধানও। যদি সত্যিই রিগিং হয়ে থাকে, তিনিও কি তার দায় অস্বীকার করতে পারেন? পার্থসারথীর দাবি, “গ্রামীণ এলাকার ভোটে আমার কোনও ভূমিকা ছিল না। আর এগুলো মানতে পারিনি বলেই তো তৃণমূল ছেড়েছি।”
যে ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েত এলাকায় এ দিনের সভা হয়েছে, তা মূলত উদ্বাস্ত অধ্যুষিত। এক সময়ে উদ্বাস্তুদের জন্যই গড়ে উঠেছিল এই উপনগরী। ফলে, সেখানে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু উদ্বাস্তু আবেগও উসকে দিতে চেয়েছেন। তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী সিএএ-র বিরোধিতা করছেন। সিএএ মানে কাউকে তাড়ানো নয়। যাঁরা বাধ্য হয়ে ও-পার বাংলা থেকে এ-পার বাংলায় চলে এসেছেন, তাঁদের সম-নাগরিকত্ব প্রদান।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বরাবরই প্রশ্ন তুলে এসেছেন, যাঁদের ভোটে দেশের মন্ত্রীরা নির্বাচিত হন, তাঁদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে।
ভোটে রিগিং রুখতে বিরোধীদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “ভোট মিটে যাওয়ার পর সব দলের প্রার্থী, সব দলের এজেন্ট, তৃণমূল-বিরোধী জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনাদের জন্য ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে।”
নদিয়ায় বিজেপি ছাড়া বিরোধী দল বলতে মূলত সিপিএম। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিলেও এ দিনই কিন্তু সিপিএমের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ সেলিমের নাম করে তাঁকে ‘তৃণমূলের দালাল’ বলে অভিহিত করেন শুভেন্দু। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দে বলেন, “ওঁর শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই আমাদের। উনি নিজে নারদ ও সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত।”
সুমিতের দাবি, “এই শুভেন্দু অধিকারী ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে বলে গিয়েছিলেন, বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত করলে পাঁচ কোটি টাকা করে পাবে।তা কিন্তু আমাদের মনে আছে।” তাঁর মতে, “আমরা শুধু বুঝি, তৃণমূলকে হারাতে গেলে আগে বিজেপিকে হারাতে হবে। এখন নিজেরা পারবেন না বুঝে ওঁরা সিপিএমের সাহায্য চাইছেন!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy