তালা খুলে অফিসের টেবিল মুছে ঝাড়ুটা হাতে নিতেই ছুটে এল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা খাতুন।
শিক্ষকের হাত থেকে ঝাড়ুটা কেড়ে নিয়েই সাফাই শুরু হল অফিসের। ঘণ্টা হাতে দৌড় দিল ছাত্র সেলিম মণ্ডল। এক্ষুনি হইহই ক্লাস শুরু হবে।
কিন্তু চারটি ক্লাস এক জন শিক্ষক নেবেন কী করে?
শিক্ষক আব্দুল লতিফ মাথা চুলকে বলেন, ‘‘পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সাহায্য করে বলেই চলছে কোনও ক্রমে।’’ ছাত্রসংখ্যাও কমছে হুড়মুড় করে। গত বছরে ছাত্র ছিল ১৪১ জন, এ বারে নেমেছে ৮০-তে। অভিভাবকদের খেদ, ছ’বছর পেরিয়ে গেল স্কুলের বয়স। প্রথমে অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলত। পরে এক শিক্ষক এলেন, তার পরপরই আগের শিক্ষক অবসর নিলেন। ছেলেমেয়েরা কিছুই শিখছে না। তাই তাদের দূরের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।
ইসলামপুরের পিছিয়ে পড়া গ্রাম ঘুঘুপাড়া। শিক্ষার হার মেরেকেটে ২০ শতাংশ। গ্রামে কোনও হাইস্কুল নেই। এলাকার মানুষের দাবি মেনে ২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেই এক ফালি জমিতে তৈরি হয় ঘুঘুপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল। তা নামেই, কোনও পরিকাঠামো নেই। একটি অফিসঘর। একটি ঘরেই চারটি ক্লাস এক সঙ্গে নিতে হয় এক জন শিক্ষককে। কখনও ঘরের এ প্রান্তে গিয়ে দেখে আসছেন অঙ্ক তো ও প্রান্তে গিয়ে বোঝাচ্ছেন ভূগোল বা বিজ্ঞান। শিক্ষক আব্দুল লতিফের কথায়, ‘‘কপাল ভাল, লাগোয়া প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা পঞ্চম শ্রেণিটা সামলে দেন।’’
এই সে দিন দুপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লম্বা একটি ঘরে চলছিল দু’টি ক্লাস। সামনে তৃতীয় শ্রেণি আর পিছনে পঞ্চম। মাঝখানে দাঁড়িয়ে শিক্ষক এ দিক-ও দিক করছেন। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ওখানে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় ছাত্রছাত্রীরা। দিনের পর দিন ওরা ক্লাস না করে এমনি ঘুরে বেড়ায়। আমাদের শিক্ষকেরা তাই নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছেন।’’
অভিভাবক অনারুল শেখের আক্ষেপ, ‘‘ভেবেছিলাম, গ্রামে স্কুল হল, এ বার ছেলেমেয়েরা ভাল ভাবে লেখাপড়া করতে পারবে। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পাশের গ্রামে আর যেতে হবে না। কিন্তু কোথায় কী?’’ গ্রামবাসী আব্দুল হাই বলেন, ‘‘প্রথমে একটা ক্লাস ছিল, এক শিক্ষক। খুব অসুবিধা হত না, কিন্তু ক্লাস বাড়লেও শিক্ষক বাড়েনি। ফলে ছাত্রদের কেবল যাতায়াত আর মিড-ডে মিল খাওয়া হয় এখন।’’
স্কুলের সদস্য সম্পাদক তথা রানিনগরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অজয়কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলটির জন্য অতিথি শিক্ষকের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে জেলা শিক্ষা দফতরে। তা পেলে কিছুটা সুরাহা হবে।’’ স্থায়ী শিক্ষক কবে নিয়োগ হবে তা জানা নেই কারও, তাই এই আর্জি। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পুরবী দে বিশ্বাস বলেন, ‘‘অতিথি শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দিতে আমরা রাজি আছি।’’ যদিও কিন্তু অবসর জীবনে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় কেউ আর নিয়োগ নিতে চাইছেন না।
স্থানীয় হুড়শি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামবাসী আমাদের সামনে পেলেই ক্ষোভ দেখান। অনেক ছাত্র দূরের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। বারবার শিক্ষা দফতরে জানিয়ে হাঁফিয়ে গিয়েছি।’’ রানিনগর ১-এর বিডিও গোবিন্দ নন্দী বলেন, ‘‘অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে সমস্যাটা শুনেছি। শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy