মাটি কেটে চূর্ণী নদী পথে ট্রলারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। সোমবার সকালে। রানাঘাটে। —নিজস্ব চিত্র।
শীতের নিস্তব্ধ মাঝরাতে একটু কান পাতলেই শোনা যায় নদীতে ট্রলার যাওয়ার শব্দ। উত্তর থেকে দক্ষিণে। কয়েক ঘণ্টা বাদে, দিনের আলো ভাল করে ফোটার আগেই আবার সেই শব্দ ফিরে যায় দক্ষিণ থেকে উত্তরে। চূর্ণী দিয়ে এ ভাবেই ট্রলার বোঝাই করে মাটি পৌঁছে যাচ্ছে নদীর পাড়ে থাকা বিভিন্ন ইটভাটায়। কখনও ভাগীরথীর পাড়, কখনও বা তার প্রবাহপথে গজিয়ে ওঠা চরের মাটি কাটাহচ্ছে নির্বিচারে।
রানাঘাট শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে চূর্ণী নদী। শহর লাগোয়া গ্রামীণ এলাকায় নদীর দুই পারেই রয়েছে ইটভাটা। নদীপারের বাসিন্দারা বলছেন, নদীতীরের মাটি কেটে ইটভাটায় পৌঁছে দেওয়ার কারবার নতুন নয়। গভীর রাতে খালি ট্রলার চূর্ণী নদী দিয়ে রানাঘাটের দিক থেকে পৌঁছে যাচ্ছে পায়রাডাঙার কাছে ভাগীরথীর মোহনায়। ভাগীরথী ধরে কিছুটা এগোলেই মঙ্গলদীপ। সূর্য ওঠার আগেই কাজ হাসিল করছে মাটি পাচার চক্রে যুক্ত লোকজন।
সব জেনেও কিন্তু প্রাণভয়ে এই বেআইনি কাজে বাধা দিতে পারেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। চাষিদের দাবি, রোজই রাত আড়াইটে-৩টে নাগাদ রানাঘাট থানার শিবপুর ঘাট এলাকার কাঠের ট্রলার নদীতে ভিড়তে শুরু করে। এক-একটা ট্রলারে থাকে সাত থেকে ১০ জন। নদীর চরে নেমে মাটিতে কোদাল চালাতে শুরু করে তারা। ১০-১২টি ট্রলার বেআইনি মাটি কাটার কাজ চালাতে থাকে। ভোর আলো ফুটতে শুরু করলে ট্রলারগুলি নদীপথেই অন্যত্র চলে যায়।
প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগেই শান্তিপুরে ভাগীরথীর চর থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। তাতে মাটি কারবারিদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল এলাকার চাষিদের। বছর তিনেক আগে রানাঘাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে বিএলএলআরও মঙ্গলদীপ এলাকা থেকে মাটি ভর্তি ট্রলার আটক করেছিলেন। কয়েক জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তার পর কিছু দিন মাটি কারবার বন্ধ থাকলেও ফের দৌরাত্ম্যশুরু হয়।
রানাঘাট ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলএলআরও) অমিয়কুমার বিশ্বাস অবশ্য দাবি করছেন, "নিয়মিত অভিযান চলছে। মাটি কাটার বিষয়টি নজরে এলে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।" তবে শীতের সময় গভীর রাতে নদীপথে মাটি ভর্তি ট্রলার ইটভাটায় পৌছে গেলেও নজরদারি সম্ভব হচ্ছে না, তা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। তা হলে মাটিচক্রের রমরমা বন্ধ হবে কী ভাবে, সেই প্রশ্নই এখন তুলছেননদীপারের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy