Advertisement
E-Paper

রাজীব ছাড়া ভোট, সংশয় তৃণমূলেই

চাপড়ার নিচুতলার কর্মীদের একটি অংশই শুধু নয়, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের একটা অংশ চাইছে, রাজীব আবার দলে ‘নিজের জায়গা’ ফিরে পাক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২০
Share
Save

দলের কাছে ক্রমশ ‘শাঁখের করাত’ হয়ে উঠছেন রাজীব শেখ। অথচ কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তিনিই ছিলেন চাপড়া ব্লক তৃণমূলের অন্যতম ‘অপরিহার্য’ নেতা, যাঁকে ছাড়া দলের সভা-সমিতি, মিছিলে লোক ভরানো থেকে শুরু করে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না জেলার নেতারাও।

সেই রাজীবই এখন পুলিশের তাড়া খেয়ে এলাকাছাড়া। নেতৃত্বের একটি অংশ তাঁর পিঠে ক্রমশ ‘সমাজবিরোধী’ তকমা লাগিয়ে দিতে মরিয়া। কিন্তু চাপড়ার নিচুতলার কর্মীদের একটি অংশই শুধু নয়, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের একটা অংশ চাইছে, রাজীব আবার দলে ‘নিজের জায়গা’ ফিরে পাক। আবার রাজীবের নানা কাজকর্মে ‘অস্থির’ ব্লক নেতৃত্ব চাইছেন না যে তিনি ‘স্বমহিমায়’ ফিরে আসুন।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় থেকে চাপড়া তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছিলেন রাজীব। বাম জমানা থেকে কার্যত একাই চাপড়া বাঙ্গালঝি কলেজে টিএমসিপি-র ধ্বজা ধরে রেখেছিলেন তিনি। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও হন। পরে তৃণমূলেও তাঁর দ্রুত উত্থান হতে থাকে। বিধায়ক রুকবানুর রহমানের কার্যত ‘ডান হাত’ হয়ে উঠে তিনি ব্যাপক ক্ষমতা ভোগ করতে থাকেন। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ব্লকের সমাজবিরোধীদের নিয়ে বাহিনী গড়ে ফেলেছিলেন রাজীব। তাই নানা প্রয়োজনে তাঁর উপরে ভরসা করতে থাকেন জেলার নেতারাও।

কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে রুকবানুরের সঙ্গে ব্লক সভাপতি জেবের শেখের বিরোধ তৈরি হওয়ার পরে। ব্লক সভাপতি হয়েও রাজীবকে দমাতে পারছিলেন না জেবের। কিন্তু নানা সাংগঠনিক কারণে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে রুকবানুরের দূরত্ব তৈরি হওয়ার সুযোগ নেন তিনি। রাজীবকে দলের মধ্যেই কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই মধ্যে গাছায় রাস্তা তৈরি নিয়ে বিবাদের মধ্যে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে রাজীবের বিরুদ্ধে। যেন এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল অপর পক্ষ। ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয় রাজীবের বাবা, চাপড়া ২ অঞ্চল সভাপতি কাংলা শেখকে। দুই ভাইকে নিয়ে গা ঢাকা দেন রাজীব।

দলের অনেকেই কিন্তু মনে করছেন, ঘটনা এখানে শেষ নয়, বরং শুরু। কারণ ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট, এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই রাজীবের বাহিনীই ছিল শাসক দলের প্রধান সম্বল। পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে এনেছেন তিনি। লোকসভা ভোটেও চাপড়ার বহু বুথে রিগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। দলের ভিতরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই ‘ভোট মেশিনারি’ বাদ দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে বৈতরণী পেরনো যাবে তো? রাদীবের শূন্যস্থান কে পুরণ করবে?

চাপড়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ খোরসেদ আলম মণ্ডলের মতে, “রাজীব দলের জন্য অনেক কিছু করেছে। আজ দল তার যা প্রতিদান দিচ্ছে, সেটা ঠিক হচ্ছে না।” আবার কলিঙ্গ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাহিদ আলমের দাবি, “দলেরই স্বার্থে রাজীবকে পুরো জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।” দলেরই নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ বলতে শুরু করেছেন, যে জেলা নেতা রাজীবকে এখন ‘সমাজবিরোধী’ বলে দেগে দিচ্ছেন তিনিই কিন্তু গত লোকসভা ভোটে তাঁকে পুরোপুরি ব্যবহার করেছিলেন।

এর পাশাপাশি অন্য দিকও আছে। রাজীবের দৌলতেই চাপড়ায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে প্রচুর সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। রাজীবের হাত ধরে এঁদের অনেকে প্রধান বা উপপ্রধান হয়েছেন। এঁরা রাজীবের প্রতি ‘কৃতজ্ঞ’, তাঁর ইশারায় অনেক কিছু করতে পারেন। ফলে বিধানসভা ভোটে রাজীব যদি দলের বাইরে থেকে ‘অন্য রকম’ কোন খেলা খেলেন, তা হলে কিন্তু অনেক হিসেবেই ওলোটপালট হয়ে যেতে পারে। রুকবানুরের বক্তব্য, “রাজীব যদি কোনও অন্যায় করে থাকে তার জন্য পুলিশ-প্রশাসন আছে। কিন্তু দলের নেতৃত্বের উচিত তাকে

ঠিক ভাবে ব্যবহার করা। দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে রাজীবের প্রয়োজন আছে।”

যদিও তা মানতে নারাজ জেবের শেখ। তাঁর মতে, “মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেয়। আর মাথার উপরে আমাদের জেলা সভানেত্রী আছেন। বাকি কে কী করল তাকে কিছু আসবে-যাবে না।”

TMC West Bengal Assembbly Election2021 Chapra

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।