খুলনা থেকে আসা সোহান। মঙ্গলবার গেদেয়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
গোটা একটা দিন কেটে গিয়েছে। তার পরেও আতঙ্কের ছায়া সোহানের চোখে-মুখে।
সোমবার রাতে সোহান আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে। তাঁর দাবি, সেখানে তাঁকে হোটেলের ভিতরে আটকে রেখেছিল বেশ কয়েক জন। তাদের হাতে মোবাইল আর ডলার সঁপে দিয়ে তবেই ভারতে আসার ছাড়পত্র পান তিনি। মঙ্গলবার গেদে পৌঁছে এমনটাই দাবি করলেন আওয়ামী লিগের এই নেতা।
সোহান জানান, তাঁর বাড়ি খুলনায়। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ‘হিন্দু মুসলিম ঐক্য লিগ’-এর খুলনা জেলা সভাপতি বলে নিজের পরিচয় দিয়ে সোহানের দাবি, “ওরা ছিল বিএনপি আর জামাতের লোক। আমাকে চিনতে পেরে ওরা আটকে রেখেছিল। সব কেড়ে নিয়েছে। প্রাণেই মেরে ফেলত। ওদের ডলার দিয়ে শান্ত করে আমি কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছি।”
সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনার ইস্তফা ও দেশ ছাড়ার খবর সামনে আসতেই বিএনপি ও জামাত সমর্থকেরা লাঠি, ধারালো অস্ত্র, এমনকী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামে দাবি করে সোহান বলেন, “বেছে বেছে আওয়ামী লীগের লোকজনের দোকান ও বাড়িতে ওরা হামলা চাায়। আগুন ধরিয়ে দেয়। আমাদের সাংসদের বাড়িতে লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর পর আর দেশে থাকার সাহস পাইনি। জীবন বাঁচাতে ভারতে চলে এসেছি।” বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধ বাবা একাই রয়েছেন জানিয়ে সোহান বলেন, “বাবা মুক্তিযোদ্ধা। কিছুতেই ভিটেমাটি ছেড়ে আসতে চাইলেন না। জানিনা শেষ পর্যন্ত তাঁর কপালে কী আছে।” ভারতে আশ্রয় না পেলে তিনি অন্য দেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন বলে সোহান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সমর্থক আরিফ হোসেনও গেদে চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে পালিয়ে এসেছেন। সঙ্গে বন্ধু সোহেল রানা। তাঁদের বাড়ি মেহেরপুর। চোখে মুখে আতঙ্ক আর ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। মুদি দোকানি আরিফ দাবি করেন, “কাল বিকাল থেকে ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে আর কিছু নেই। জামাত আর বিএনপি গোটা এলাকা দখল করে নিয়েছে। মেহেরপুরের প্রায় এক হাজার দোকান ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে। জন প্রশাসন মন্ত্রী ফরাজ হোসেনের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওখানে আর থাকার উপায় নেই। প্রাণে বাঁচতেই এ দেশে আশ্রয়ের খোঁজে এসেছি।” তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সোহেল বলেন, “হাসিনা ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে রাস্তায় কোথাও পুলিশ নেই। সেনা নেই। বিভিন্ন থানায় ঢুকে পুলিশের উপর হামলার চালিয়ে অস্ত্র লুট করা হয়েছে। মেহেরপুর সদর থানা থেকেও অস্ত্র লুট হয়েছে। পুলিশই এখন বাঁচার রাস্তা খুঁজছে।”
রাজশাহী থেকে আসা মহম্মদ শরিফ বলেন, “সোমবার সারা রাত ধরে ভাঙচুর-লুঠপাট চলেছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে অগুন্তি বাড়িতে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু আর আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে সকাল থেকে পরিবেশ অনেকটা শান্ত। বাস-ট্রেন বন্ধ, শুধু অটো ভরসা।” হাড়ের ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে কলকাতা থেকে বিমানে বেঙ্গালুরু যাবেন রাজশাহীর বয়নুদ্দিন হক। অ্যাম্বুল্যান্সে করে ছেলে আর নাতি তাঁকে গেদে চেকপোস্টে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা জানান, রাস্তার দু’দিকে শুধু ভাঙচুর-আগুনের চিহ্ন। চুয়াডাঙার সামসুন্নাহার বিবি তাঁর মেয়ে মরিয়মকে নিয়ে তিনি কলকাতার হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। গেদে চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “দর্শনা চেকপোস্টে আসার সময় রাস্তার দুই ধারে দোকান-বাড়ি ভাঙচুরের চিহ্ন দেখেছি। এক জায়গায় লুটপাট হতেও দেখলাম।”
চেকপোস্ট দিয়ে যাঁরাই ভারতের দিকে আসছেন, সকলেরই চোখে-মুখে আশঙ্কা স্পষ্ট। একমাত্র বছর পঁচিশের সাহেব মোল্লা আর তাঁর মা আনজুয়ারা বিবির মুখে একগাল হাসি। বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন তাঁরা। দেশের ফিরতে পেরে তাঁদের খুশি আর ধরে না। আনজুয়ারা বিবি বলেন, “এত সুন্দর একটা দেশকে কত দ্রুত নষ্ট হতে দেখলাম। বেঁচে যে ফিরতে পারলাম, এটাই অনেক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy