Advertisement
E-Paper

প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি ঘুমের ওষুধ

নিয়মানুযায়ী, বেশ কিছু ওষুধ ‘এইচ-ওয়ান’ শ্রেণিতে পড়ে। এই শ্রেণির কোনও ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কারণ এগুলির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে এবং এই ধরনের বেশ কিছু ওষুধে নেশাও হয়।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মনিরুল শেখ 

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৫
Share
Save

যে ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেওয়া নিষিদ্ধ তা-ই দেদার বিকোচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। এক বারের জন্যও কেউ বিক্রির আগে প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইছেন না। এই ভাবেই অনায়াসে গাদা-গাদা ঘুমের ওষুধ কিনে যুবক-যুবতীদের অনেকে নেশা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কল্যাণীতে। ড্রাগ কন্ট্রোলের কোনও নজরদারি সেখানে থাকছে না বলেও অভিযোগ।

নিয়মানুযায়ী, বেশ কিছু ওষুধ ‘এইচ-ওয়ান’ শ্রেণিতে পড়ে। এই শ্রেণির কোনও ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কারণ এগুলির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে এবং এই ধরনের বেশ কিছু ওষুধে নেশাও হয়। ক্রেতার কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে তা প্রতিলিপি করে বা ছবি তুলে রেখে নথিভুক্ত করে তবেই এই ধরনের ওষুধ বিক্রির কথা। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, মুনাফার জন্য কয়েকটি ওষুধের দোকান নিয়ম লঙ্ঘন করছে। তারা বিনা প্রেসক্রিপশনে বেশি দামে ওই সব ওষুধ বিক্রি করছে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুপর্ণা রায়চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই ধরনের ওষুধ নেশার জন্য খেতে থাকলে ধীরে-ধীরে মনোসংযোগ, চিন্তা করার ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি নষ্ট হতে থাকে। মাথাটা ধীরে ধীরে ভোঁতা হয়ে যায়। অনেকে ঘোরের মধ্যে থাকেন। খাওয়া বন্ধ করলে বেশির ভাগ মানুষ বুক ধড়ফড়, অনিদ্রায় ভোগেন। অনেকের তীব্র খিঁচুনি হয়। তাই চাইলেও অনেকে ওষুধ বন্ধ করতে পারেন না।

বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ এক যুবকের সঙ্গে সেন্ট্রাল পার্কে স্টেট ব্যাঙ্কের উল্টোদিকের একটি ওষুধের দোকানে যাওয়া হল। ওই যুবক বহুদিন ধরেই ওই দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ কেনেন বলে দাবি করেছিলেন। তাঁর মতো আরও অনেকের অভিযোগ, যে ট্যাবলেটের দাম এই দোকানে ১৫ টাকা করে নেওয়া হয় তার দাম বাজারে হয়তো ৪ টাকা। এ নিয়ে নেশাড়ুদের সঙ্গে দোকানির মাঝেমধ্যে ঝামেলাও বাধে। এক নেশাড়ু এক বার এই ঝামেলার জেরে দোকানের সাটার পুড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

যুবকের সঙ্গে ওই দোকানে গিয়ে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ চাইতেই দিব্যি দিয়ে দিলেন দোকানি। ওষুধ হাতে পাওয়ার পর নিজের সাংবাদিক পরিচয় জানালে দোকানি একটু থতমত খেলেন। তার পর বললেন, ‘‘অনেকে এসে চায় বলে দিই। বেশির ভাগই নেশা ছাড়ানোর হোমে কিছু দিন কাটিয়ে ফিরে আসা লোক। আর কোনওদিন বেচব না।’’ শহরঘেঁষা চাঁদামারি এলাকার এক ব্যক্তির ওষুধের দোকান রয়েছে কল্যাণী সীমান্ত স্টেশন এলাকায়। এ দিন দুপুরে অন্য এক যুবকের সঙ্গে সেই দোকানে যাওয়া গেল। ঘুমের ওষুধ চাওয়া হল। দোকানি শুধু ঠিকানা জানতে চাইলেন। তারপরেই ট্যাবলেট দিয়ে দিলেন। তখন তাঁকেও পরিচয় জানিয়ে প্রশ্ন করা হয়, আপনি বিনা প্রেসক্রিপশনে এটা দিলেন কী করে? সঙ্গে-সঙ্গে তিনি প্রায় ছিনিয়ে ওষুধটি ফেরত নেন এবং তার টাকা ফিরিয়ে দেন। বলেন, ‘‘

‘‘দুর্গাপুজোর আগে থেকেই সবে বিক্রি করতে শুরু করেছি। আর এ ভাবে দেব না।’’ তবে অভিযোগ, গত প্রায় সাত বছর ধরে তিনি এই ধরনের ওষুধ বিনা প্রেসক্রিপশনে বিক্রি করেন। নদিয়া জেলার ড্রাগ কন্ট্রোলের সহ-অধিকতা কৃষ্ণাঙ্গ ভট্রাচার্য বলেন, ‘‘এ ভাবে এইচ-ওয়ান ড্রাগ, বিশেষ করে ঘুমের ওষুধ বিক্রি করা যায় না। গর্হিত অপরাধ। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন দোকানমালিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হয়েছে। কল্যাণীতে যাঁরা এটা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের ওষুধ বিক্রির অনুমতি বাতিল হতে পারে।’’ তবে ড্রাগ কন্ট্রোল সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে অফিসারের আকাল রয়েছে। ফলে রাজ্যের কোথাও ওষুধের দোকানে ঠিকঠাক নজরদারি চালানো যাচ্ছে না। তাতেই এই ধরনের বেআইনি বিক্রি বাড়ছে।

Sleeping Pill Kalyani Prescription

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}