Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sagardighi

খোঁয়াড়ের বলদ নিয়ে গলদঘর্ম সারোয়ার

গরুর খাবারের  টাকা  জোটাতে গত আড়াই মাসে বাড়ির বহু জিনিসই বিক্রি করেছেন। বেচতে হয়েছে বৌয়ের কানের দুল দু’টিও।

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২৭
Share: Save:

সারোয়ার জাহানের মাথায় হাত। খোঁয়াড় ভর্তি গরু। কিন্তু গাই গরু হলেও না হয় একটা কথা ছিল। দু’বেলা দুধটা মিলত। কিন্তু হার জিরজিরে ডজন খানেক বলদ নিয়ে এখন আতান্তরে পড়েছেন তিনি। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থায় বলদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন থানার দারোগাবাবুদের কাছে। দিয়েছেন লিখিত আর্জিও।

সারোয়ার বলছেন, “নিজের সংসার সামলাবো, না খোঁয়াড়ের বলদ দেখব তাই বুঝে উঠতে পারছি না। এতদিন জানতাম বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা, কিন্তু বলদে ছুঁলে কী হয় এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।”

সাগরদিঘি থানার গৌরীপুর গ্রামে বাড়ি সারোয়ারের। পান, বিড়ির দোকান চালান। তাতে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসারে কুলোচ্ছিল না। তাই পাটকেলডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে একটি খোঁয়াড় নিয়েছেন এক বছরের ইজারায়। আশপাশের গরু, ছাগল ফসল খেলেই খোঁয়াড়ে দিয়ে আসেন জমির মালিকেরা। পরে পশুর মালিক গিয়ে পয়সা দিয়ে ছাগল, গরু ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এ ভাবেই চলছিল মোটামুটি। কিন্তু এখন পড়েছেন বিপদে।

কী বিড়ম্বনা? শোনা যাক সারোয়ারের জবানিতেই, “সাগরদিঘি থানার পুলিশের হাতে ২৩ সেপ্টেম্বর কাকভোরে পাশেই ইসলামপুরে ধরা পড়ে ১৯টি বলদ। সেই ১৯টি গরুরই আশ্রয় হয়েছে সারোয়ারের খোঁয়াড়ে। মোটা আয়ের সুযোগ পেয়ে বেশ স্ফুর্তিতেই ছিলেন প্রথম প্রথম সারোয়ার। ভেবেছিলেন পাঁচ, দশ দিন পরেই মালিক এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে খোঁয়াড়ের গরু। মিলবে মোটা টাকা।

কিন্তু একি! আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও গরুর মালিকের আর দেখা নেই। খোঁয়াড়ে রাখার ভাড়া তো কোন ছাড়, প্রতিদিন গরুর খাবারের টাকা জোটাতেই এখন প্রাণান্তকর অবস্থা তাঁর। গত আড়াই মাসে বাড়ির বহু জিনিসই বিক্রি করেছেন। বেচতে হয়েছে বৌয়ের কানের দুল দু’টিও। কিন্তু আর তো চলছে না।

শুধু কি তাই? গত আড়াই মাসে একটা একটা করে মারা পড়েছে ৯টি গরু। সোমবারও সকালে মারা গেছে দুটি। পাশেই ভাগীরথী। কিন্তু মরা গরু জলে ভাসিয়ে দিলেও বিপদ। তাই নদীর পাড়েই গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দিতেও খরচ ৪০০ টাকার কম নয়।

পুলিশ কী করছে? সারোয়ারের কথায়, “যখনই থানায় যাই দারোগাবাবুরা বলেন আর দুদিন সবুর কর, আদালত থেকে আদেশ পেলেই সব গরু নিলাম করে বিক্রি করে তোর টাকা মিটিয়ে দেব। কিন্তু এ গরু নিলামে নেবে কে? কত ইবা দাম উঠবে? গরুর খাওয়া ও খোঁয়াড়ের খরচ ধরে আমারই তো পাওনা ১ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। আর বেঁচে থাকা ১০টি হাড় জিরজিরে গরু বেচলে দাম হবে বড় জোর ৪০ হাজার।’’ প্রাক্তন প্রধান শাদরুল আমিন বলছেন, “বেশ সমস্যায় পড়েছেন সারোয়ার।’’ সাগরদিঘি ওসি সুমিত বিশ্বাস বলছেন, “আমরা জঙ্গিপুর আদালতের কাছে গরুগুলি নিলাম করার জন্য অনুমতি চেয়েছি। তা পেলেই গরু নিলামে উঠবে। সারোয়ারের পাওনাও তাকে মিটিয়ে দেওয়া হবে।” কিন্তু কবে? সে কথা কেউ বলতে পারছেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Sagardighi Cattle Farm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy