‘টোকেন’ মিললেই টাকা!
নদিয়া সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যে কোটি কোটি টাকার কাশির নিষিদ্ধ সিরাপ পাচার হয়, সে জন্য দুই দেশের পাচারকারীদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন হয় হুন্ডি বা হাওয়ালার মাধ্যমে। সে জন্য কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া এলাকাতেই (যেখানে সম্প্রতি একাধিক ভূগর্ভস্থ কুঠুরি তথা বাঙ্কার-বোঝাই সিরাপ ধরা পড়েছে) আছে বড় ‘সিন্ডিকেট’। তদন্তে তারা তেমনই জেনেছে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ সূত্রের খবর, ও-পার থেকে মোবাইলে সিরাপের ‘অর্ডার’ আসে এ-পারের পাচারকারীদের কাছে। ‘কেরিয়ার’ মারফত সেই মতো সিরাপ কাঁটাতারের বেড়া টপকে পৌঁছে দেওয়া হয় ও-পারে। কিন্তু নগদ টাকা সে ভাবে আসবে না! আবার ব্যাঙ্ক বা টাকা লেনদেনের কোনও বৈধ পদ্ধতি মারফত সেই টাকা পাঠানো চলে না। তাই ভরসা হাওয়ালা।
পুলিশ সূত্রের দাবি, ও-পারে যারা হুন্ডি চালায়, তাদের কাছে বাংলাদেশের পাচারকারীরা টাকা জমা দেয়। পরিবর্তে, তাদের নির্দিষ্ট সঙ্কেতের ‘টোকেন’ দেওয়া হয়। এ-পারে যারা হুন্ডি চালাচ্ছে, তাদেরও সেই সঙ্কেত জানিয়ে দেওয়া হয়। আগে ও-পারের পাচারকারীরা অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াত করা কিছু লোকের হাতে ‘টোকেন’ এ-পারে পাঠিয়ে দিত। এখন ‘মেসেজিং অ্যাপ’-এ ‘টোকেন’-এর ছবি পাঠানো হয়। ‘টোকেন’-এর সঙ্গে ও-পার থেকে আসা সঙ্কেত মিলিয়ে দেখে এ-পারের হুন্ডি কারবারিরা। সঙ্কেত মিললে তারা নিজেদের কমিশন কেটে, হাতে-হাতে নগদ টাকা দিয়ে দেয়।
গেদে, মাজদিয়া ও কৃষ্ণনগরে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র আছে। হাওয়ালার পাশাপাশি পাচারকারীরা সেগুলোর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন একেবারে করে না, তা নয়। কখনও-সখনও যে তেমন রাস্তাও নেওয়া হয়েছে, সেই প্রমাণ পুলিশের কাছে আছে। মাজদিয়ার পাচারকারী পাপ্পু আগরওয়াল গ্রেফতার হওয়ার পরে সেখানকার এক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের মালিকের নাম তদন্তে উঠে এসেছিল। তবে পুলিশ গ্রেফতার করার আগেই সে আগাম জামিন নেয়। সুশান্ত ঘোষ ওরফে লাল বা অন্য সিরাপ পাচারকারীদের সঙ্গে তার এখনও যোগাযোগ রয়েছেকি না, দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের দাবি, সিরাপ পাচারের টাকা এখন যাচ্ছে অন্য ব্যবসাতেও। সুদের ব্যবসায় খাটছে। নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার এক কর্তার কথায়, “এক-এক বোতলে যদি আটশো থেকে হাজার টাকা লাভ থাকে, তা হলে শুধু এক বার বড় মাপে পাচার করতে পারলে কত টাকা আসতে পারে, হিসাব করা কঠিন। এই বিপুল পরিমাণ টাকা ‘রিয়েল এস্টেট’-সহ নানা ব্যবসায় খাটানো হচ্ছে। কারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তাতে যুক্ত, নজর রাখছি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)