কাশির নিষিদ্ধ সিরাপ মজুতের ‘বাঙ্কার’ নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কৃষ্ণগঞ্জে পাওয়া গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই কারবারের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে।
গত বছর জুলাইয়ে কৃষ্ণগঞ্জের সুশান্ত ঘোষ ওরফে লালের বিশ হাজার বোতল সিরাপ ধরা পড়ার পরে, তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, বৈধ ভাবে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও সিকিমে সীমিত পরিমাণ কাশির সিরাপ তৈরি হয়। বিপুল পরিমাণ অবৈধ সিরাপ আসে অন্য তিন রাজ্য থেকে। সে সব বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ দাম (এমআরপি) লেখা থাকে ২২৬ টাকা। কিন্তু পাচারকারীদের কেনা দাম পড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এর পরে, সীমান্তে সেগুলি পৌঁছতে পরিবহণ ও আনুষঙ্গিক (যার মধ্যে ‘ঘুষ’-ও আছে) খরচ মিলিয়ে বোতল পিছু গড়ে আরও ১০ টাকা মতো পড়ে।
পুলিশ সূত্রের দাবি, সে সব বোতল বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছলে সেগুলো মাটির নীচের কুঠুরি (বাঙ্কার) বা অন্যত্র মজুত করে বিভিন্ন এজেন্ট মারফত শয়ে-শয়ে ‘কেরিয়ার’-এর হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এক ডজন বোতল সেলোটেপ বা ব্ল্যাক টেপ দিয়ে ভাল করে মুড়ে একটা করে বান্ডিল বানিয়ে ফেলা হয়, পাচারকারীদের মধ্যে যা ‘পাতা’ নামে পরিচিত। এক ‘পাতা’ সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে ‘কেরিয়ার’-কে সাধারণত এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। ঝুঁকি বাড়লে টাকার অঙ্ক বাড়ে। প্রথম দলের ‘কেরিয়ার’-দের কাছ থেকে সেগুলো নিয়ে দ্বিতীয় দলের ‘কেরিয়ার’-রা একেবারে সীমান্তে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। মওকা বুঝে কাঁটাতার পার করে ও-পারে ছুড়ে দেয়।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, একটা বোতল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে সব খরচ মিলিয়ে মোটামুটি ১৭০-১৮০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ও-পারের পাচারকারীদের থেকে সিরাপের বোতল পিছু ভারতীয় মুদ্রায় হাজার থেকে বারোশো টাকা মেলে। অর্থাৎ, এক বোতল সিরাপ অন্য রাজ্য থেকে এনে পাচার করতে পারলে, আটশো থেকে হাজার টাকা মতো লাভ! কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার এক কর্তা শুক্রবার বলেন, “আমরা জেনেছি, পাচারের টাকা হুন্ডি বা হাওয়ালার মাধ্যমে লেনদেন হয়। আমরা চক্রটিকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)