কাশির নিষিদ্ধ সিরাপের কারবারে চটজলদি লাভের টানে রাজ্য ও অন্য রাজ্যের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মোটা টাকা লগ্নি করছেন বলে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ‘বাঙ্কার-কাণ্ড’-এর তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে।
কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার এক কর্তার কথায়, “এই মুনাফার সামনে ‘সারদা’ বা ‘রোজ় ভ্যালি’র মতো বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার আর্থিক প্রলোভন শিশু।” পুলিশ মনে করছে, নিজস্ব নিয়মেই তৈরি হয়ে গিয়েছে ‘সিন্ডিকেট’ যার মধ্যে পাচারকারী ছাড়াও ঝুঁকি নিতে পারার মতো ‘বেপরোয়া’ ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। তাঁদের ‘প্রকাশ্য ব্যবসা’ আলাদা এবং পাচার কারবারে জড়িত বলে সন্দেহ করার মতো সরাসরি কোনও ‘প্রামাণ্য কারণ’ খুঁজে পাওয়া শক্ত।
সম্প্রতি কৃষ্ণগঞ্জে মাজদিয়া কলেজের কাছে, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কিলোমিটার দেড়েক দূরে একাধিক ভূগর্ভস্থ কুঠি বা ‘বাঙ্কার’ বোঝাই নিষিদ্ধ সিরাপ মেলে। মূল সন্দেহভাজন সুশান্ত ঘোষ ওরফে ‘লাল’ এখনও অধরা।
তদন্তকারীরা যে হিসাব মেলাতে পারছিলেন না তা হল, ফুলে-ফেঁপে ওঠা এই কারবার চালাতে যে মূলধন বা বিনিয়োগ প্রয়োজন তা আসছে কোথা থেকে? কারণ, পাচারের ‘বড় মাথা’ হিসাবে যে সব নাম এ পর্যন্ত সামনে এসেছে, তাদের বেশির ভাগের পুঁজি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আচমকা বড় ‘অর্ডার’ এলে যে বাড়তি টাকা লাগে, তা চট করে বার করা তাদের পক্ষেও মুশকিল। পুলিশ সূত্রের দাবি, তদন্তে সে সব ব্যবসায়ীদের কথা জানা গিয়েছে, যাঁরা মোটা সুদে টাকা খাটান বা কখনও সরাসরি লভ্যাংশের চুক্তিতে অল্প সময়ের জন্য লগ্নি করেন। যেমন ১৫ দিনের জন্য দু’লক্ষ টাকা ওই ব্যবসায়ীদের থেকে নিলে, ফেরত দিতে হয় তিন লক্ষ টাকা। পুলিশ-জেলার এক কর্তার কথায়, “খুব অল্প সময়ের জন্য বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়। তখন পাচারকারীরা যেমন করেই হোক তা জোগাড়ের চেষ্টা করে। সে সুযোগটাই নেয় ওই ব্যবসায়ীরা।”
এর পরেই কিছু বড়-মেজো ‘রিয়েল এস্টেট প্রোমোটার’-এর পাশাপাশি এমন কিছু ব্যবসায়ীও আতশকাচের তলায় চলে এসেছেন বলে খবর পুলিশ সূত্রের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)