Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

জুতো এল, পায়ে নয় উঠল তাকে

৬৮ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য দু’জন শিক্ষক। তাঁরাও বহিরাগত। মোটরবাইকে গ্রামে মুখ পর্যন্ত এসে  বাকি পথ প্যান্ট গুটিয়ে, চটি হাতে স্কুলে ঢুকে রগড়ে পা ধুচ্ছেন তাঁরা। বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে বলছেন, ‘‘এক জোড়া জামা-প্যান্ট স্কুলেই রেকে দিয়েছি, পথে রোজ আছাড় খাচ্ছি যে!’’  

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

স্কুল থেকে জুতো মিলেছে তিন সপ্তাহ আগে। কিন্তু সে জুতো তোলা রয়েছে বাড়ির তাকে। এক হাঁটু কাদা ভেঙে স্কুল-যাত্রায় কি জুতো পরা যায়!

ছেলেপুলেরা বলছে, “এক হাঁটু কাদার রাস্তায় জুতো পরে স্কুলে যাব কি করে? পাঁকে গেঁথে যাবে যে!’’

সাগরদিঘির প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলবন। গ্রামে ঢোকার মুখ পর্যন্ত ঢালাই রাস্তা। তবে গ্রামে পা রাখতেই পাঁকাল রাস্তা। স্কুলের পথ যেন টাল সামলে ট্রাপিজের খেলা। প্রায় শ’পাঁচেক মিটার দীর্ঘ সে পথ জুতো গলিয়ে গেলে পাঁকে থই পাবে না ছেলেপুলেরা। স্কুলের জুতো তাই হাতে পেয়েও ঠাঁই হয়েছে বাড়ির তাকে।

৬৮ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য দু’জন শিক্ষক। তাঁরাও বহিরাগত। মোটরবাইকে গ্রামে মুখ পর্যন্ত এসে বাকি পথ প্যান্ট গুটিয়ে, চটি হাতে স্কুলে ঢুকে রগড়ে পা ধুচ্ছেন তাঁরা। বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে বলছেন, ‘‘এক জোড়া জামা-প্যান্ট স্কুলেই রেকে দিয়েছি, পথে রোজ আছাড় খাচ্ছি যে!’’

সাগরদিঘির ফুলবন গ্রামের এটাই রোজনামচা। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক মির্জা জসিমুদ্দিন বলছেন, “এক কালে কাদা ঠেলেই গ্রামে বড় হয়েছি আমরা। তাই কষ্ট হলেও কোনওরকমে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিচ্ছি। কিন্তু স্কুল পরিদর্শকের অফিসে দৌড়দৌড়ির পরে ছেলেমেয়েদের জন্য জুতো আদায় করলাম ঠিকই কিন্তু ছেলেমেয়েগুলোর পায়ে তা উঠবে কি করে, এই রাস্তায় জুতো

পড়া যায়।’’

স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মোহন কিস্কু বলছে, “কোনও দিন জুতো পরিনি তো, খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু ঘরের বাইরে পা রাখলেই তো কাদা।’’ তৃতীয় শ্রেণির সপ্তমী হেমব্রমের মুখ ভার, “স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটাই তো কাদা ভর্তি। জুতো জোড়া তাই ঘরের তাকে তুলে রেখেছি। মনে মনে ভেবেছি পুজোর সময়ে পড়ব।’’

ছেলেমেয়েদের কথায় বিব্রত প্রধান শিক্ষক বলছেন, “সত্যিই তো ওদের কী করে জুতো পড়তে বলি বলুন তো।’’

চতুর্থ শ্রেণির আকাশ কিস্কুর মা রাহাবতী বলছেন, “রাস্তায় দু’দিন আছাড় খেয়ে কাদা মেখে ঘরে ফিরেছে ছেলে। জুতো জোড়া পড়ার বড় শখ। তা আর পায়ে উঠল কই!’’

সাগরদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের অরূপ মন্ডল মানছেন সত্যিই ফুলবনের রাস্তাটির অবস্থা বেশ খারাপ। গ্রাম পঞ্চায়েত ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে। কিন্তু ওই রাস্তা ঢালাই করতে খরচ তো প্রায় দ্বিগুন। জেলা পরিষদের কাছে তদ্বির করছি, দেখি তাঁরা সদয় হন কী না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

School Shoe Sagardighi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy