Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
পঞ্চভূতের পঞ্চায়েত/ ১
Finance commission

কুর্সি পেয়েও টাকা খরচ করতেই হোঁচট

দলাদলি আর ভাগাভাগির জটে আটকে গিয়েছে উন্নয়ন। বোর্ডের দখল আর উপসমিতির ক্ষমতার টানাপড়েনে বরাদ্দ অর্থ খরচ করা যাচ্ছে না। ফল ভুগছে সাধারণ মানুষ। কেন এই দুরবস্থা? নদিয়া জেলা জুড়ে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।     

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১৬
Share: Save:

চলতি বছর পঞ্চদশ অর্থ কনিশনের বরাদ্দ অর্থের এক শতাংশও খরচ করতে পারেনি কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের সাধনপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাপ্ত টাকার মাত্র ০.৪২ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে তারা।

কারণ?

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর বোর্ড গঠনের সময় থেকেই এই গ্রাম পঞ্চায়েতে ডামাডোল চলছে। তৃণমূলকে বাদ দিয়ে নির্দল সদস্যকে প্রধান নির্বাচিত করে বোর্ড গঠন করেছেন বিজেপি, সিপিএম ও নির্দল সদস্যেরা। কিন্তু সংখ্যার অঙ্কে উপসমিতি দখল করেছে তৃণমূল। প্রথম থেকেই বিজেপি-সিপিএম নেতৃত্ব অভিযোগ করে আসছেন, কাজ করতে দিচ্ছে না তৃণমূল। সমস্ত প্রকল্প উপসমিতিতে গিয়েই আটকে যাচ্ছে।

সাধনপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। নদিয়া জেলায় রাজ্যের শাসক-বিরোধীদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলিতে টাকা খরচের অবস্থা খুবই করুণ। অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত তিন-চার শতাংশের বেশি টাকা খরচ করতে পারেনি। তার কারণ হিসাবে উঠে আসছে বিরোধী পঞ্চায়েতগুলিকে শাসকের অসহযোগিতা, শাসক দলের অন্দরে কোন্দল-সহ একাধিক কারণ। আবার তৃণমূলের হাতে থাকা বেশ কিছু পঞ্চায়েতও ২০ শতাংশের বেশি টাকা খরচ করতে পারেনি। ফলে অস্বস্তিতে প্রশাসন। পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতের নেতাকর্মীদের নিয়ে বার বার বৈঠক করে, কর্মীদের শাস্তিমূলক বদলি করেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।

এর জ্বলন্ত উদাহরণ কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের রুইপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েত। তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সেখানে বোর্ড গঠন করতে পারেনি তৃণমূল। তৃণমূলের অন্যতম সদস্য অনুপ মণ্ডল সিপিএম ও বিজেপির সমর্থন নিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীকে হারিয়ে প্রধান হয়েছেন। তার পর থেকে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ। উপসমিতিগুলি তৃণমূলের দখলে থাকায় সেই জটিলতা আরও প্রবল হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই গ্রাম পঞ্চায়েত মাত্র প্রায় ১.৯১ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধান অনুপ মণ্ডলের দাবি, “প্রথম থেকে বিরোধিতা একটা ছিলই। উপসমিতিগুলোতে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।”

মাঝ-জুলাইয়ের হিসাব অনুয়ায়ী, জেলায় এমন অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত আছে যারা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা প্রায় খরচই করতে পারেনি। সেই সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশির ভাগই বিরোধীদের দখলে। কোনওটা বিজেপি একক ভাবে দখল করেছে, কোথাও আবার সিপিএম-বিজেপি ও কংগ্রেস একসঙ্গে মিলে বোর্ড গঠন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত জেলায় টাকা খরচ করতে না পারার নিরিখে প্রথম ৩০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০টিই বিরোধীদের দখলে। তা নিয়ে বিরোধী ও শাসক শিবির পরস্পরকে দোষারোপ করতেই বেশি ব্যস্ত।

বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের দাবি, “তৃণমূল কোনও দিনই মানুষের মতামতকে সম্মান করে না। তাই যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত ওরা দখল করতে পারেনি, সেই সমস্ত এলাকায় উন্নয়নের কাজে নানা ভাবে বাধা দিচ্ছে। দিনের শেষে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করছে।” একই সুরে সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত বিশ্বাসও দাবি করেন, “বিরোধীদের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে মাস্টার প্ল্যান তৈরি হলেও উপসমিতিগুলি কাজ করতে দিচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেও প্রশাসনের সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে না। তৃণমূল চায় না, বিরোধীদের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতে মানুষের জন্য কোনও কাজ হোক।”

যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমানের পাল্টা দাবি, “বাধা দেওয়ার বা অসহযোগিতার প্রশ্নই ওঠে না। বিরোধীরা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এই ধরনের দাবি করছে। এ থেকে প্রমাণিত যে একমাত্র তৃণমূলই মানুষের জন্য কাজ করতে চায়।” (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Finance commission Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy