কালীগঞ্জের রায়চৌধুরী পরিবারের কুলোদেবী ভুবনেশ্বরী। ছবি: সন্দীপ পাল
সারা বছরই খাঁ খাঁ করে বাড়ি। উঁচু উঁচু থাম ধুলোয় ঢেকে যায়। দুর্গাপুজোর সময়টুকু ছাড়া দেওয়ালে কান পাতলেও কারও গলার আওয়াজ শোনা যায় না বললেই চলে। তবে পুজোর সময়টা অন্যরকম। গম গম করে গোটা চত্বর।
বৃহস্পতিবার দেখা গেল সেই ছবিটাই। বাড়ির চারিদিক সাফাই সুতরোর কাজ চলছে। একটা হই হই ব্যাপার। আর হবে নাই বা কেন! কালীগঞ্জের জমিদার বাড়ির পুজো বলে কথা। জমিদারি নেই। তবে তাতে কিছু এসে যায় না। অতীতের রীতি মেনেই ভক্তি, নিষ্ঠার সঙ্গে আজও পুজো হয় রায়চৌধুরী পরিবারে। এলাকার অনেকের কাছেই যার পরিচিতি বাবু বাড়ি নামে।
পরিবারের সদস্যরা জানালেন, পুজো কবে শুরু তার দিনক্ষণ সঠিক জানা না গেলেও আনুমানিক দু’শো বছরের পুজো। পূর্ণচন্দ্র গুপ্ত শর্মা বাংলাদেশের ঢাকার গয়েশপুর থেকে এখানে চলে আসেন। তাঁর পুত্র হারাধন গুপ্ত শর্মার সময় জমিদারি প্রথার শুরু। পরে ইংরেদের দেওয়া ‘রায়চৌধুরী’ উপাধির পরে রায়চৌধুরী পরিবার নামেই এলাকায় খ্যাত হন তাঁরা। কথিত আছে, পরিবারে আগে দুর্গাপুজো হলেও হারাধন রায়চৌধুরীর জমিদারিকে প্রথম সতেরো ফুটের একচালি কাঠামোর উপর প্রতিমা তৈরি হয়। আজও সেই প্রথা চলছে। এখন অবশ্য বহনের সুবিধার জন্য চালি দু‘ভাগ করা হয়েছে। রথের দিন কাঠামোয় মাটি পড়ে। মায়ের গাত্রবর্ণ হলুদ। অসুরের রং সবুজ। নিয়ম মেনে আজও বাড়ির পুরুষেরা মহিলাদের সঙ্গে পুজোয় হাত লাগান।
পরিবারের সদস্যদের কথায়, পঞ্চমীতে বেলতলায় ঘট স্থাপন করা হয়। ষষ্ঠীর দিন বিকালে অধিবাস হয় বাড়িরই বেলতলায়। সপ্তমীর দিন ঘর থেকে দুর্গামণ্ডপে মা ভুবনেরশ্বরীকে নিয়ে আসার পরেই প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কুলোদেবী মা ভুবনেশ্বরী মণ্ডপে তিন দিন থাকেন। যদিও চাদরার কেদার রায়ের কুলোদেবী ভুবনেশ্বরীই বিরাজ করতেন এই পরিবারে। ১৯৯৪ সালে দেবীর বিগ্রহ চুরি যাওয়ার পর ফের নতুন করে ভুবনেশ্বরী দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো করা হয়। নবমী ও দশমীতে দেবীকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। অতীতে পশুবলির প্রথা ছিল। পরবর্তিকালে পরিবারের তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রায়চৌধুরী পরিবারে কোনও দিন কালীপুজো হয়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, কুলোদেবী ভুবনেশ্বরী দশ মহাবিদ্যর এক বিদ্যা।
সেই কারণে বাড়ির বাইরে বেদিতে মা কালী পূজিত হন। পরিবারের তরফে দীপক সেন বলেন, ‘‘ওই কালীপুজোর সময় ভারতে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ। তাঁরই সম্মানে ষষ্ঠী দাস রায়চৌধুরী কালীবেদির নাম দেন। এলাকায় ওই বেদি জর্জ কালীতলা নামেই পরিচিত।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy