Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Murshidabad TMC

‘বিদ্রোহী’ থেকে ‘কৌশলী’ হুমায়ুন, তৃণমূলের নতুন জেলা সভাপতির সঙ্গে ছবি, নয়া সমীকরণ?

পঞ্চায়েতের প্রার্থী মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে নানা বিষয়ে আক্রমণের পর আচমকা বেশ ‘সতর্ক’ ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির।

Humayun Kabir

অপূর্ব সরকার এবং হুমায়ুন কবির। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ভরতপুর শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৫২
Share: Save:

সদ্য মনোনীত তৃণমূল জেলা সভাপতিকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন জেলার বিধায়কেরা। উপস্থিত দলের সাংসদও। সে দিনের অনুষ্ঠানে কেবলমাত্র ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের অনুপস্থিতি জল্পনার জন্ম দিয়েছিল। তবে সব জল্পনায় জল ঢেলে কলকাতা এমএলএ হস্টেলে মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সদ্য মনোনীত সভাপতি অপূর্ব সরকারের গলা জড়ানো নিজের হাসিমুখের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করলেন নিজেই। পাশাপাশি ছবি তোলার আগে ‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও হয়েছে’ বলে কৌতূহল বাড়ানোর চেষ্টা করেন ‘বিদ্রোহী’ হুমায়ুন।

বস্তুত, পঞ্চায়েতের প্রার্থী মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে নানা বিষয়ে আক্রমণের পর আচমকা বেশ ‘সতর্ক’ হুমায়ুন। তিনি বলেন, “ডেভিড (অপূর্ব) আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সহকর্মী। এ বার অনেক ভাল কাজ হবে।’’ শাওনি সিংহ রায়কে সরানোর পর পরই হুমায়ুন মন্তব্য করেন, আগামী লোকসভা ভোটে জেলায় ভাল ফল করবে তৃণমূল। অন্য দিকে, সভাপতি ঘোষণার পর মুর্শিদাবাদের সদর বহরমপুরের দলীয় অফিসে যখন অপূর্বকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, সে দিনই ‘ব্যক্তিগত কাজে’ দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন ভরতপুরের বিধায়ক। সে দিনের জল্পনার পর শনিবারের ফেসবুকে অপূর্বের সঙ্গে ছবি দিলেন হুমায়ুন।

উল্লেখ্য, সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভানেত্রী শাওনির বিপরীত গোষ্ঠী হুমায়ুনরা। আর হুমায়ুনের একাধিক দাবির পক্ষে ছিলেন অপূর্ব। ভরতপুরের দু’টি ব্লকে নিজের পছন্দের ব‍্যক্তিকে ব্লক সভাপতি পদে বসাতে চেয়েছিলেন বিধায়ক। কিন্তু তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে ভরতপুর-১ এ নজরুল ইসলাম ওরফে টার্জানকে ব্লক সভাপতির পদে বসান শাওনি। একই ভাবে ভরতপুর-২ ব্লক সভাপতির পদ থেকে হুমায়ুন-ঘনিষ্ঠ আজহারউদ্দিন ওরফে সিজারকে সরিয়ে ওই পদে বসেন শাওনি-ঘনিষ্ঠ মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে সুমন। যাঁদের সঙ্গে হুমায়ুনের একেবারেই বনিবনা ছিল না বলে তাঁর দলীয় সূত্রে খবর। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই চাপা ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। বিধায়ক তাঁর ঘনিষ্ঠদের নির্দল প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধেই দাঁড় করিয়ে দেন। যা তৃণমূলকেই অস্বস্তিতে ফেলে। পরে নির্বাচনে জিতে কর্মাধ্যক্ষ হয়েছেন মুস্তাফিজুর। একই রকম ঘটনা ঘটেছে নওদা, জলঙ্গি, রেজিনগর, হরিহরপাড়াতেও। সে সব নিয়ে হুমায়ুন বলেন, “আমরা স্বৈরাচারী শাওনি সিংহ রায়ের সভাপতি পদের বদল চেয়েছিলাম। রাজ‍্য নেতৃত্ব আমাদের দাবি মেনে নিয়ে শাওনিকে সরিয়ে দিয়েছেন।” এ বার কি আবার ব্লক সভাপতি পদে আজহারউদ্দিন ওরফে সিজারকে ভরতপুর-২ ব্লকে দেখা যাবে? হুমায়ুনের জবাব, “আমি রাজ‍্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি, ওঁরা (টারজান ও সুমন) কী ভাবে পুরনো জেলা সভাপতির ইন্ধনে পঞ্চায়েত ভোট করে দলের মুখ ডুবিয়েছিল।’’

দলের অন্দরে অবশ্য সুমনের ব্লক সভাপতির পদ হারানোর তত্ত্ব জোরাল হচ্ছে। তৃণমূলে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি চালু আছে। সেই নীতি মানলে মৎস্য কর্মাধ্যক্ষকে একটি পদ ছাড়তে হবে। ব্লক সভাপতির পদ ছাড়াটাই সে ক্ষেত্রে সুবিধার বলে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। আগামী ২৩ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে কলকাতা যাবেন জেলার তৃণমূল নেতারা। তার পরেই হয়তো ভরতপুরের মতো একাধিক ব্লকে দলের সভাপতির মুখবদল হবে। এমনটা বলছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশই। আর নতুন জেলা সভাপতি অপূর্ব বলছেন, ‘‘আমার সঙ্গে কারও সম্পর্ক খারাপ নয়। আবার কারও সঙ্গে বাড়তি ভাল সম্পর্কেও বিশ্বাসী নই। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে যে দায়িত্ব পেয়েছি, সে টুকু নির্বাহ করতে যা করার করব। তার বেশি কিংবা কম নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad TMC Humayun kabir TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE