Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

মা দুগ্গার কাছে মানতের শাড়িও নিয়েছে নদী

শুক্রবার থেকে বৃষ্টির বিরাম নেই। রবিবারও দুপুরেও রেশ টানার লক্ষণ নেউ। শনিবার রাতে বৃষ্টি ও ভাঙনের ধাক্কায় হোসেনপুরের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যে সুতোর মতো যোগাযোগ ছিল তা প্রায় ছিন্ন হতে বসেছে। 

হোসেনপুরের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে।

হোসেনপুরের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে।

বিমান হাজরা
হোসেনপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১১
Share: Save:

বোধনের আগেই যেন বিসর্জনের ছায়া হোসেনপুরে।

শুক্রবার থেকে বৃষ্টির বিরাম নেই। রবিবারও দুপুরেও রেশ টানার লক্ষণ নেউ। শনিবার রাতে বৃষ্টি ও ভাঙনের ধাক্কায় হোসেনপুরের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যে সুতোর মতো যোগাযোগ ছিল তা প্রায় ছিন্ন হতে বসেছে।

পরিস্থিতি দেখতে রবিবার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার। তবে গ্রাম-পথের হাল দেখে সে পরিকল্পনা বাতিল করেন। জেলাশাসককে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত গ্রামের কথা জানাবেন বলে অপেক্ষায় থাকা গ্রামবাসীরা তাই বলছেন, ‘‘কর্তারা গ্রামে পা দিতেই ভরসা পান না বুঝেছেন!’’ ভাঙনে ভিটে হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ভরসা বলতে সরকারি ত্রাণ শিবিরের খিচুড়ি। পুজোর মুখে ভাঙনগ্রস্ত হোসেনপুরে আর কোনও রোদ্দুর নেই! জমিজমা, ভিটে হারিয়ে দুর্গাপুজোও এখন গ্রাম ছাড়া যেন। এক সময় দুর্গামন্দির ছিল গ্রামেরই ধুলাউড়ি হাটখোলায়। গোটা গ্রাম পুজোর ক’দিন আনন্দে মেতে থাকত। নদী সে মন্দির গিলেছে। মন্দির হারালেও গ্রামের ফ্লাড শেল্টারেই পুজো হত এত দিন। এখন তাও বন্ধ।

তবু আনন্দটা টিঁকে ছিল। নতুন জামা কাপড়ে দল বেঁধে পড়শি গ্রাম মালদহের চর সুজাপুরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য প্রসেনজিৎ মন্ডল বলছেন, “গতবার মন্দির ধসে গেলেও আনন্দটুকু মিলিয়ে যায়নি। এই প্রথমবার চর পুজোহীন, কষ্ট হলেও না মেনে উপায় কী!”

দুর্গা পুজো বন্ধ হলেও গ্রামে ঘটা করে মনসা পুজোর চল আছে প্রায় সব বাড়িতেই। ভাঙনের ধাক্কায় সে সব প্রতিমা এখন খোলা আকাশের নীচেই পড়ে রয়েছে। নদী থেকে মিটার দশেক দূরে রূপেশ মণ্ডলের বাড়ি। নদীকে ভরসা না করেই ভেঙে নিয়েছেন সে বাড়ি। বলছেন, “এই প্রথম কোনও পুজোয় ছেলেমেয়েগুলোর নতুর জামা কাপড়টাও দিতে পারছি না। মা দুগ্গাকে মানত করে একটা শাড়ি কিনেছিলাম। নদী তাও নিয়ে গেল।” সোনামণি মণ্ডল গ্রামেরই প্রাথমিকে পড়ে। বাবা অসিত মন্ডল চাষবাস করে কোনওরকমে সংসার চালান। ৫ ভাই বোনের ছোট সোনামণি বলছে, “দুর্গা পুজো আগেই বন্ধ হয়েছে। ভাঙনের জন্য এ বারের বিশ্বকর্মার মেলাটাও বন্ধ হয়ে গেল।” মাছ ধরে সংসার চলে রামচরণ মন্ডলের। ৪ ছেলে মেয়ে স্ত্রী কারুরই জামা কাপড় কিনে দিতে পারেননি এখনও। বলছেন, “পুজো নেই ঠিকই, তা বলে তিন ছেলে মেয়ের আনন্দটাও মুছে যাবে? ভেবেছিলাম জমির পাট কেটে যা আসবে তাতে জামা কাপড় দেব। কিন্তু নদী তাও ভাসিয়ে দিল।” পাশেই পারুল মণ্ডলের বাড়ি বলতে চাটাইয়ের উপর টিন। মঙ্গলবার বিকেলে ভেসেছে সে বাড়িও। পারুল বলছেন, “দুই ছোট ছেলের জামাটা কিনেছিলাম এক ফেরিওয়ালার কাছে। নদী তা-ও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

River Erosion Durga Puja 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy