সীমান্ত সমস্যার জন্য বিপাকে গ্রামবাসীরা। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ছোট্ট গ্রাম হাবাসপুর। ধানতলা থানার দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এই কৃষিনির্ভর গ্রামে হাজার দেড়েক মানুষের বাস। ইছামতীর শুকনো চরে ধান, পাট বা সর্ষে চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন কেউ কেউ।
গ্রামে কোনও পাকা বাড়ি নেই। বিএসএফ ৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের আউটপোস্টে পরিচয়পত্র জমা রেখে ঢুকতে হয় গ্রামে। নিজভূমেই যেন পরবাসী হাবাসপুরের বাসিন্দারা। জীবিকা সমস্যা নয়, গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে ভেতরে ঢুকলে শোনা যায় বাস্তুহারা হওয়ার দীর্ঘশ্বাস।
ঝোড়পাড়া সীমান্তে বেশির ভাগ অংশে কাঁটাতারের সীমারেখা তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলেও ইছামতীর পাড় ঘেঁষা হাবাসপুরে এখনও তা বসেনি। তার মূল কারণ জমিজট। সীমান্তরেখা অনুযায়ী গ্রামের মাঝ বরাবর বসানো হবে কাঁটাতার। ফলে ভিটে-জমি হারাতে হবে অনেক গ্রামবাসীকে, যাঁদের জমি কাঁটাতারের অন্য দিকে পড়ে যাবে। তাঁরা যাবেন কোথায়? কেন্দ্র আর রাজ্যের দড়ি টানাটানিতে আটকে রয়েছে ক্ষতিপূরণের টাকাও।
কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী, বাস্তহারা বাসিন্দাদের জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতি শতকে ৯৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। অথচ রাজ্যের হিসাব বলছে, মেরে-কেটে এক শতকে ২৭ হাজার টাকা করে পাবেন তাঁরা। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ভিটেজমির দলিল দেখাতে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে গ্রামবাসীদের।
ভাঙাচোরা বাড়ির উঠোনে বসে সত্তরোর্ধ্ব বাঁকাচাঁদ বিশ্বাস বলেন, “১৯৫৬ সাল থেকে এই গ্রামে বসবাস করছি। ভিটে-জমি তো পূর্বপুরুষের। এই বয়সে বাড়ি ছাড়তে হবে? জমির দলিল নিয়ে কৃষ্ণনগরের জমি অফিসে গেলাম। ওরা বলছে, প্রতি শতকে ২৭ হাজার টাকা করে পাব। পরের জমিতে কাজ করে খাই। এটুকু টাকায় কোথায় বাড়ি করব? আমার বাপ-ঠাকুরদার জমি কী ভাবে আউশ জমি হয়ে গেল?” বছর কয়েক আগে হারিয়েছেন বড় ছেলেকে। ছোট ছেলেও অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। গরু-ছাগল বেচতে হয়েছে পেটের টানে। সংসার টানতে এখন বিড়ি বাঁধেন তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী।
এমন অসহায়তার ছায়া শুধু এই দাওয়াতেই নয়, পড়েছে গ্রামের অন্য নানা বাড়ির অভাবি উঠোনেও। কেন্দ্র জমির ক্ষতিপূরণের দাম বেঁধে দিলেও, কেন রাজ্যের হিসেব অন্য? নদিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) রবিপ্রকাশ মীনা বলেন, “মূল সমস্যাটা কোথায় রয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আপাতত কিছু যদি-কিন্তু-হয়তোর সুরু সুতোয় ঝুলে আছে্ সীমান্ত-ছোঁয়া হাবাসপুরের ভবিষ্যৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy