শুখা মরসুমে গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তি খতিয়ে দেখতে ৫ দিনের সফরে এসেছে বাংলাদেশের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওই দলের সদস্যেরা গঙ্গার ডাউন স্ট্রিম ও ফিডার ক্যানালের জলস্তর পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন। পরে বিকেল পর্যন্ত ফরাক্কা ব্যারাজ ও ভারতীয় দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন। বুধবার তাঁরা কলকাতায় ফিরে যাবেন। বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমিটির ৮৬ তম বৈঠক এবং শুক্রবার কারিগরী পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা কলকাতার একটি বেসরকারি হোটেলে। সূত্রের খবর, শনিবার বাংলাদেশে ফিরে যাবেন তাঁরা।
এটি গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে রুটিন বৈঠক। এই সফর ঘিরে কৌতূহল রয়েছে। গত বছরের অগস্ট মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে দু’দেশের কূটনৈতিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক কতটা প্রভাব ফেলে সেটাও দেখার বিষয়। কারণ দুই দেশেই এই চুক্তি নিয়ে ঘোর বিরোধিতা রয়েছে।
এই জল বণ্টন চুক্তি শুরু হয় প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত। গঙ্গার জল প্রবাহ অনুযায়ী ১০ দিন অন্তর গঙ্গার জল প্রবাহে বদল ঘটে দুই দেশের মধ্যে। সবটাই নিয়ন্ত্রিত হয় ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে। বাংলাদেশের তরফে এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মহম্মদ আবুল হোসেন।
মঙ্গলবার ফরাক্কায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত চুক্তি মতো গঙ্গার জল ছাড়ার বিষয়টি বাংলাদেশের ৪ জন প্রতিনিধি ফরাক্কায় থেকে জলপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন। ভারতের ৪ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ সেতুতে জলস্তর পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছরই এই সফরে আসি। ফরাক্কায় আসেন বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা। ভারতের প্রতিনিধিরা যান বাংলাদেশে।’’
তিনি বলেন, “জানুয়ারি মাসে গঙ্গার জলস্তর ছিল বেশ ভাল। তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে কিছুটা কমেছে জলস্তর। জল কমাবাড়াটা প্রাকৃতিক নিয়ম। দু’দেশের মধ্যে জল বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে ঠিক মতোই। চুক্তি মতোই গঙ্গার জল পাচ্ছে দু’টি দেশই। এখান থেকে ফিরে কলকাতায় বৈঠক হবে দুই দেশের মধ্যে বৃহস্পতি ও শুক্রবার।জল বণ্টন নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই বাংলাদেশের।”
ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার আর কে দেশপান্ডে বলেন, “জলচুক্তি পর্যবেক্ষণ রুটিন বিষয়। দুই দলের দু’টি প্রতিনিধি দল শুখা মরশুমে জল বণ্টন দেখার জন্য রয়েছে ফরাক্কা ব্যারাজ ও হার্ডিঞ্জ সেতুতে। এই মুহূর্তে গঙ্গায় ৬৮ হাজার কিউসেক জল রয়েছে।”
১৯৯৬ সালে কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে শুখা মরশুমে গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সেই চুক্তি মতো ১ জানুয়ারি থেকে প্রতি দশ দিন অন্তর কখনও ভারত, কখনও বাংলাদেশ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কিউসেক জল পাবে এমনটাই ঠিক হয়। ৩০ বছরের জন্য এই চুক্তি এ বারে ২৯বছরে পড়ল। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে।
আবুল হাসান বলেন, “এই জলচুক্তি নবীকরণ করতে দুই দেশেরই একটি কমিটি হবে। তারাই আলোচনা করে ঠিক করবেন তা। কোথায় সেই চুক্তির নবীকরণ নিয়ে আলোচনা হবে, ঢাকায় না দিল্লিতে, সেটা ওই কমিটিই ঠিক করবে। বর্তমানে রুটিন সফরে বর্তমান জল বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, সেগুলি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এবং তার রিপোর্ট পাঠানো হয় দু’টি দেশের কাছেই।”
ফরাক্কা ব্যারাজের ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গড় জল প্রবাহ ছিল ১০৭,৫১৬ কিউসেক। খরা যত বাড়ত ততই কমত জল প্রবাহ। এপ্রিলের শেষে সেই জল প্রবাহ নেমে আসত ৬০,৯৯২ কিউসেকে। ফরাক্কার মূল ব্যারাজ থেকে জল প্রবাহ বেরিয়ে যায় ধুলিয়ান, সুতি, জঙ্গিপুর লালগোলা হয়ে বাংলাদেশে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)