তারকনগর হল্টের সেই রেলগেট। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
চোখের সামনে একের পর দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছেন। সরাসরি রেলের কাছে দরবার করেছেন। প্রতিকার তো হয়ইনি, বরং রেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ নিয়ে এসে ঘিরে দিতে চেয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের এক মাত্র রাস্তাটিকে। সেটা আটকানো গেলেও দুর্ঘটনা রোখা যায়নি।
শেষে তারকনগর হল্ট স্টেশনে রেললাইনের দু’পাশে গেট বানিয়ে নিলেন এলাকার মানুষই। সেই গেট তোলা আর নামানোর জন্য নিয়োগ করা হয়েছে দু’জন কর্মীও। বাজার কমিটি, অটো, ভ্যান, টোটো ইউনিয়ন থেকে চাঁদা তুলে তাঁদের বেতনের ব্যবস্থা হয়েছে। ট্রেনের টাইম টেবিল মেনে খোলা-বন্ধ হচ্ছে গেট। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এলাকার মানুষ, বিশেষত স্কুলপড়ুয়াদের অভিভাবরা। কিন্তু রেল বলছে, গোটা ব্যাপারটাই পুরোপুরি ‘বেআইনি’।
শিয়ালদহ-গেদে শাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল্ট স্টেশন তারকনগর। দিনে ১৯ জোড়া ট্রেন দাঁড়ায় এখানে। আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ স্টেশন পেরিয়ে চলাচল করেন। একেবারে গা ঘেঁষে গিয়েছে রাস্তা। শিবনিবাস থেকে গাজনা পর্যন্ত ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষ। শিবনিবাস থেকে গাজনা হয়ে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে ভাজনঘাট, একটি বগুলা। এছাড়াও ফতেপুর, কৈখালি, রামনগরেও ভাগ হয়ে গিয়েছে আরও তিনটি রাস্তা। গাজনা, ফতেপুর, শিবনিবাস, ভাজনঘাট, গাঁড়াপোতা, কমলপুর, চুনারি, মোবারকপুর, পেঁপুলবেড়িয়া, হরিতলার মতো আরও বহু গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন।
শুধু কি মানুষ? তারকনগরে লাইন পেরিয়ে চলাচল করে অন্তত ১৩০টি অটো, ৩০টি টোটো, ৩০টি ভ্যান আর খান বিশ লছিমন (যন্ত্রচালিত ভ্যান)। পাঁচটি হাইস্কুল আর একটি জুনিয়র স্কুলের পড়ুয়ারা প্রতিদিন পারাপার করে লাইন। পাশেই বড় বাজার। তা ছাড়া, হাসপাতাল বা ব্যাঙ্কে যেতেও লাইন পেরোতে হয়।
লাইন পেরোতে গিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনে ধাক্কা খেয়েছে সব্জি বোঝাই গাড়ি। ধাক্কায় ছিটকে গিয়েও কোনও রকমে বেঁচেছেন মোটরবাইক আরোহী। ধাক্কা খেয়েছে রিকশাও। তারকনগর বাজার কমিটির সম্পাদক ধীমান সরকার বলেন, “একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটায় আমরা রেলের কাছে স্থায়ী গেটের জন্য দরবার করেছিলাম। রেল উল্টে রাস্তা ঘিরতে এসেছিল। আমরা তা আটকেছি, কারণ রাস্তা ঘিরে দিলে প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষ আটকা পড়ে যাবেন। একটাই তো রাস্তা।”
সুকান্তনগরের বাসিন্দা, দশম শ্রেণির পড়ুয়া সীমা বিশ্বাস, মোহিত মজুমদাররা বলে, “রেলগেট হয়ে খুব ভাল হল। রোজ লাইন পেরোতে গিয়ে ভয় করত, এই বুঝি ট্রেন চলে এল!” অভিভাবক অসীম বিশ্বাস বলেন, “ছেলেমেয়েগুলো স্কুলে রওনা দিলেই চিন্তা হত। বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারতাম না। সেই দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমেছে।”
রেল অবশ্য বলছে, গোটা বিষয়টি ‘বেআইনি’। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “এটা পুরোপুরি বেআইনি। রেল কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ এই ভাবে গেট তৈরি করতে পারেন না। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
স্থায়ী গেট তৈরি করতে না পারলে সেখানে ‘গেটমিত্র’ নিয়োগ করে অস্থায়ী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘দেখি, এখানে কী করা যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy