উপনির্বাচনে প্রার্থীর হয়ে কর্মীদের নিয়ে সভা করছেন তৃণমূল নেতা জেবের শেখ।রানাঘাটে। ছবি:সুদেব দাস।
রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা উপনির্বাচনে ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচার, সাংগঠনিক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চাপড়ার তৃণমূল নেতা জেবের শেখকে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের একাংশ নেতা-কর্মী। তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে কি রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বদের উপর আস্থা নেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের? বিষয়টি নিয়ে ভোটের আগে রাজনৈতিক ভাবে সুর চড়াতে কসুর করেনি বিজেপি। তাদের হুঁশিয়ারি, উপনির্বাচনে যদি কেউ মস্তানি করতে চায়, তাহলে তারাও ছেড়ে দেবে না। সব মিলিয়ে উপনির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই চড়ছে রাজনৈতিক পারদ।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাট-১ ব্লকের ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে। এই ছয় পঞ্চায়েতে সংগঠন কী ভাবে কাজ করছে তার তদারকি ও সেই সঙ্গে মিটিং মিছিলে অংশ নেওয়া, বুথ স্তরের নেতারা বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি কী ভাবে জনসংযোগ করবেন, সেই দায়িত্ব ঠিক করে দিচ্ছেন একদা তৃণমূলের চাপড়ার ব্লক সভাপতি জেবের শেখ। জানা গিয়েছে, গত ২৩ জুন থেকে উপনির্বাচন উপলক্ষে রানাঘাট-১ ব্লকেই ঘাঁটি গেড়েছেন জেবের। তাঁকে পায়রাডাঙা, আনুলিয়া, রামনগর-২, হবিবপুর, তারাপুর, নপাড়া মুসুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। জেবেরের কথায়, "চাপড়া থেকে আমি যে এখানে এসেছি সেটা বড় কথা নয়। দল যেখানে যখন যেতে বলবে সেখানেই যাব।"
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হওয়ার পর এই কেন্দ্রের অধীন রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভার উপনির্বাচনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই মহুয়া মৈত্রকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই মত মহুয়াকে বিভিন্ন মিটিং, মিছিল ও দলের সাংগঠনিক কাজে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। আবার জেবের মহুয়া-ঘনিষ্ঠ বলেই দলে পরিচিত।
প্রশ্ন উঠছে, নদিয়ায় তৃণমূলের সাংগঠনিক আলাদা জেলা রয়েছে। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলায় উপনির্বাচনে তাহলে কেন কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার নেতাদের বাদ দিয়ে জেবেরকে ডাকা হল। সূত্রের খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে জেবের নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। তাতে সেই সময় ভোট বৈতরণী পার করতে তৃণমূল প্রার্থী রূকবানুর রহমানকে রীতিমত বেগ পেতে হয়েছিল। দলের বিরুদ্ধে যাওয়ায় জেবেরকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দলে জেবারের গুরুত্ব কতটা, তা ফল খারাপ হতেই বুঝতে পারে তৃণমূল। এরপর লোকসভা নির্বাচনের আগে বহিষ্কৃত জেবেরকে ফের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের জয়ের পিছনে জেবেরের যে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, তা স্বীকারও করেছে দল। যে কারণে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব মুকুট জয়ে মহুয়ার পাশাপাশি জেবেরকেও বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছে।
তবে উপনির্বাচনে জেবেরকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের একটা অংশ এই কাজকে ভালভাবে নিচ্ছেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘এ যেন 'দায়িত্বহীন ক্ষমতা বনাম ক্ষমতাহীন দায়িত্বের' প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "মোটেও এই ধরনের ব্যাখ্যা ঠিক নয়। আমাদের দলে নেতা বলে কেউ নেই। প্রত্যেকেই আমরা কর্মী। তাই দল যখন যাঁকে যেমন দায়িত্ব দেয়, আমরা সেই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি। আমরা প্রত্যেকেই ঐক্যবদ্ধ এবং প্রার্থীকে জেতানো আমাদের লক্ষ্য।"
দায়িত্ব পেয়ে কী ভাবে উপনির্বাচনের কাজ সামলাচ্ছেন জেবের? জেবের বলেন, ‘‘সময় খুব কম। তাই যে ভাবে সংগঠন সাজানো রয়েছে সেভাবেই কাজ করছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ সামনে রেখেই মূলত ভোট চাইছি।" নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রানাঘাট সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের হাল এতটাই খারাপ যে, উত্তরে চাপড়ার থেকে জেবের শেখকে 'মস্তানি' করার জন্য নিয়ে আসতে হয়েছে। তবে আমরাও প্রস্তুত। এখানে যদি কেউ মস্তানি করতে চায়, আমরা ছেড়ে দেব না।" তিনি আরও বলেন, "কেউ অন্য জায়গা থেকে এসে ভোট প্রচার করতেই পারেন। তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু চাপড়ার মতো ভোট রানাঘাট দক্ষিণের উপনির্বাচনে করাতে গেলে আমরাও বুঝিয়ে দেব।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy