সত্যজিৎ বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।
২০১৯ সালে সরস্বতী পুজোর আগের রাতে কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে ফুলবাড়ি ফুটবল মাঠে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। অথচ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সেই মাঠে ‘বুলেট হেড’ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার বিধাননগর ময়ূখ ভবনে বিশেষ আদালতের বিচারক জয়শঙ্কর রায়ের এজলাসে সওয়াল করতে উঠে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সুবীর দেবনাথ এই বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
ওই আইনজীবীর বক্তব্য: সত্যজিৎ বিশ্বাসকে যে গুলি করে খুন করা হয়েছিল তা প্রমাণিত হয়নি। দেহের ভিতরে বা ঘটনাস্থলে ‘বুলেট হেড’ না মিললে গুলি করে খুন নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে। অথবা কেন তা পাওয়া যায়নি, পুলিশকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ ছাড়া, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞকে খুনে ব্যবহৃত বন্দুক দেখে আদালতে বলতে হবে যে ওই ধরনের বন্দুক দিয়ে এই ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হওয়া সম্ভব কি না। নিয়ম হল, ‘বুলেট হেড’ এবং খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র মিলিয়ে দেখা হবে, ওই বন্দুক দিয়ে ওই গুলি বেরনো সম্ভাব্য কি না। এ ক্ষেত্রে সে সব কিছুই করা হয়নি।
আইনজীবী আরও বলেন: যে চিকিৎসক মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন সেই তৃপ্তেশকুমার দাস আদালতে বলেছেন যে নিহতের মুখে একটা ‘সার্কেল উন্ড’ ছিল। তেমন ক্ষত হতে গেলে বন্দুক এবং যে জায়গায় গুলি করা হচ্ছে, এই দুই সামনাসামনি থাকতে হবে। কিন্তু বাদীপক্ষের অভিযোগ, সত্যজিৎকে সামনে থেকে নয়, ডান দিক থেকে ছুটে এসে মাথায় গুলি করা হয়েছে। সাক্ষীরাও আদালতে বার বার সেই কথাই বলেছেন। অর্থাৎ, মিথ্যা বলা হয়েছে বলে আইনজীবী দাবি করেন।
তাঁর সওয়ালে সুবীর দেবনাথ যোগ করেন: ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল এই আদালতেই চিকিৎসক বলেছিলেন যে তাঁরা নিহতের ডান চোখের নীচের পাতার আধ ইঞ্চি নীচে
‘এন্ট্রি উন্ড’ (গুলি ঢোকার ক্ষত) পেয়েছিলেন। অথচ অভিযোগকারী মিলন সাহা এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সুমিত বিশ্বাস, দু’জনেই আদালতে বলেছেন যে গুলি করা হয়েছে মাথায়। যার অর্থ, দুজনের কেউ গুলি চলতে দেখেননি। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, সত্যজিতের মাথার পিছন দিকে অনেকটা জায়গা নিয়ে যে ক্ষত তা আসলে ‘এক্সিট উন্ড’ (গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষত)।
এ দিনও সওয়ালে এফআইআর নিয়ে কথা ওঠে। এই মামলায় সিআইডির তদন্তকারী অফিসার কৌশিক বসাক তাঁ সাক্ষ্যে বলেছিলেন যে তিনি কোতোয়ালি থানায় নথিভুক্ত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং একটি এফআইআর বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। আইনজীবী সুবীর দেবনাথের দাবি: সেই এফআইআর আদালতে আনা হয়নি এবং নিয়ম অনুযায়ী কোনও মামলায় একবার এফআইআর হয়ে গেলে দ্বিতীয় বার আর তা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে বানানো একটি এফআইআরের ভিত্তিতে এই মামলা করা হয়েছে যা আদৌ করা যায়না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে পরবর্তী সময়ে বানানো কোনও এফআইআরের ভিত্তিতে মামলা হলে সেই মামলাটিই ‘সন্দেহজনক’ বলে বিবেচিত হবে এবং অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া যাবে না। আগামী ২৫ জুলাই ফের এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy