Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Union Budget 2024

বিড়ি, পর্যটনে অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় ক্ষোভ

পর্যটনের উন্নতি নিয়েও বাজেটে কিছু বলা হয়নি। মুর্শিদাবাদ জেলায় ২১টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ পর্যটক আসেন শুধু হাজারদুয়ারিতেই। এর সঙ্গে জড়িয়ে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা।

নির্মলা সীতারামন।

নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪০
Share: Save:

সম্ভাবনা থাকায় এক সময় মুর্শিদাবাদ জেলার অরঙ্গাবাদ ও ধুলিয়ানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বিড়ি শিল্প। বর্তমানে এই শিল্পে যুক্ত অন্তত সাত লক্ষ শ্রমিক। এ ছাড়া, এই জেলায় প্লাস্টিক শিল্পেরও এক সময় যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। এখনও এই শিল্পে কাজ করেন এক হাজার শ্রমিক। পর্যটন উপর নির্ভর করেও সংসার চলে কয়েক হাজার মানুষের। কেন্দ্রীয় বাজেটে মুর্শিদাবাদের এই তিন শিল্প নিয়ে কোনও বরাদ্দই করা হয়নি। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাস তৈরির কাজও সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রায় আড়াইশো একর জমি। বাজেটে এই প্রস্তাবিত ক্যাম্পাস নিয়েও কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। তবে বাজেটে বাড়তি কর বসানো হয়নি বিড়িতে। বিড়ি শিল্পের পক্ষে সেটাই একমাত্র স্বস্তির খবর।

কেন্দ্রীয় বাজেটে এই ‘উপেক্ষায়’ জেলাবাসীর ক্ষোভ বেড়েছে। এমনকি, জেলা বিজেপি নেতারাও বাজেটে গঙ্গার ভাঙন, বিড়ি শিল্প, পর্যটনে মুর্শিদাবাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় অসন্তোষ গোপন করেননি। বিজেপির রাজ্য কমিটি সদস্য সুজিত দাস বলেন, “বাজেটে নির্দিষ্ট ভাবে সব ক্ষেত্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয় না। তবে এই জেলায় ভাঙন রোধ, পর্যটন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ এবং বাড়তি ট্রেন চালুর দাবি আমাদের রয়েছে।” সিটুর বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিড়ি শিল্পে যুক্ত সাত লক্ষ মানুষের স্বার্থে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল। শ্রমিকেরা এখনও সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি পান না। দিনভর খেটে তাঁরা পান মাত্র ১৭৮ টাকা। কাজও কমেছে। বিড়ি শিল্প বন্ধ হলে মালিকদের অসুবিধে হবে না, কিন্তু শ্রমিকেরা বিপদে পড়বেন। তাঁদের কথা ভাবতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্যকেই।”

জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হিসেবে উমরপুরে ৭৬টি প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। বালতি, মগ, জগ, ঘটি, টিফিন, কৌটো তৈরি হয় সেখানে। এখানকার তৈরি প্লাস্টিকের সামগ্রী যায় অসম, ওড়িশা-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। বছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা হয় কারখানাগুলিতে। প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানা বর্তমানে ওড়িশা, নাগাল্যান্ড, মনিপুরেও গড়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এই অবস্থায় বাজেটে বরাদ্দ পেলে উমরপুরের প্লাস্টিক শিল্প কিছুটা স্বাবলম্বী হত বলে মনে করছেন অনেকেই।

পর্যটনের উন্নতি নিয়েও বাজেটে কিছু বলা হয়নি। মুর্শিদাবাদ জেলায় ২১টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ পর্যটক আসেন শুধু হাজারদুয়ারিতেই। এর সঙ্গে জড়িয়ে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা। অথচ কেন্দ্রীয় বাজেটে মুর্শিদাবাদের পর্যটনের উন্নতিতে কানাকড়ি বরাদ্দ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক অরিন্দম রায় বলেন, “মুর্শিদাবাদের পর্যটন মানে শুধু হাজারদুয়ারি তো নয়। জেলার প্রায় সর্বত্র কান্দি, লালবাগ, জঙ্গিপুরে পর্যটনের ক্ষেত্র ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিটিই সম্ভাবনাময়। কিন্তু জেলার ওই সব জায়গায় নেই ভাল রাস্তাঘাট, হোটেল, যানবাহন। ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকাও যদি প্রতি বছর এই খাতে বরাদ্দ হত, তাহলে পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণ হত। কিন্তু বাজেটে তা না হওয়ায় আমরা হতাশ।’’

অন্য দিকে, ২০১০ সালে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছিল। ফরাক্কা ব্যারাজের ২৮৮ একর জমি দেওয়া হয়েছিল তাদের। শুরুতে বিএড এবং এমবিএ এবং পরে আইনের পঠনপাঠন চালু হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে সামান্য অর্থও বরাদ্দ হয়নি এই ক্যাম্পাসের জন্য।

জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, “কেন্দ্রীয় বাজেটে মুর্শিদাবাদের মানুষ খুশি নন। জেলায় উৎপাদিত আম, লিচু নিয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের শিল্প গড়ে তোলা যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে পুরোপুরি উদাসীন।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE